প্লাস্টিক দূষণের অবসান ঘটাতে ভারত সঠিক এবং কার্যকর এক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে মনে করছে বোদ্ধামহল, বিশ্বব্যাপী প্রশংসাও পাচ্ছে মোদী সরকার।

প্লাস্টিক বর্জ্য চিরতরে নির্মূল এবং এটি বাস্তবায়নে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইন তৈরী করতে জাতিসংঘে ভারতের দেয়া ঐতিহাসিক প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন বিশ্বের ১৭৫ টি রাষ্ট্রের নেতা, মন্ত্রী ও প্রতিনিধিগণ। গত ০২ মার্চ, বুধবার, নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পরিবেশ পরিষদের সমাবেশে প্রস্তাবটির সমর্থনে বক্তব্য দেন উক্ত দেশের প্রতিনিধিগণ।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ভারতের দেয়া প্রস্তাবটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, “ভারতের দেয়া প্লাস্টিক বর্জ্য নির্মূলের প্রস্তাবটিতে প্লাস্টিকের পূর্ণ জীবনচক্রের উল্লেখ রয়েছে। এখানে প্লাস্টিকের উৎপাদন থেকে বিনাশের নকশা পর্যন্ত সবকিছুর উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার নাইরোবিতে শুরু হয় জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদের (ইউএনইপি) পঞ্চম অধিবেশন। প্লাস্টিক নির্মূলের প্রস্তাবটি ভারত দেয় সম্মেলন শুরুর পরদিন, অর্থাৎ, মঙ্গলবার। প্রস্তাবে প্লাস্টিক উৎপাদন মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। যদি এই উৎপাদন মোকাবেলা না করা হয়, তবে আশঙ্কা রয়েছে ২০৫০ সাল নাগাদ এই পরিমাণ প্রায় চারগুণ হয়ে দাঁড়াবে এবং বৈশ্বিক কার্বন বাজেটের ১০-১৩ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য নির্মূলেই প্রয়োজন পড়বে।

প্রস্তাবনায় পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব দেখানো সহ বায়ু, কৃষি জমি এবং পানীয় জলে এর উপস্থিতি দেখানো হয়। এরপর বিভিন্ন গবেষণালব্ধ প্রস্তাবনা থেকে এটি মোকাবেলা করার উপায় সুপারিশ করে। উল্লেখ্য, প্লাস্টিক থেকে অনেক সময় বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো মানবদেহেও প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে, যা পরবর্তীতে বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার এবং বিপাকীয় কর্মহীনতার সৃষ্টি করে। এর প্রতিকারও ভারতের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছিলো।

১৭৫ টি দেশের সমর্থন আদায় করায় ঐতিহাসিক প্রস্তাবটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক প্যাকেজিং, কম ইউটিলিটি এবং উচ্চ আবর্জনা ফেলার সম্ভাবনাযুক্ত একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক আইটেমগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত ইপিআর-এর মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকর উপায়ে প্লাস্টিক দূষণ নির্মূল করার যাত্রা শুরু করেছে।”

উল্লেখ্য, এর আগে, ভারত ‘সিঙ্গেল ইউজ’ প্লাস্টিক নির্মূলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে বলে বিশ্বকে জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদী। ১১ ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার, ফ্রান্স আয়োজিত ওয়ান ওশান সামিটে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা জানান তিনি।

সেদিন মোদী বলেন, “বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সমর্থন করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংহত করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি। আপনারা জেনে খুশি হবেন, সম্প্রতি উপকূলীয় এলাকা থেকে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পরিস্কারে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারণা হাতে নিয়েছে ভারত।”

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনও অবধি দেশব্যাপী প্রায় তিন লক্ষ যুবক মিলে প্রায় ১৩ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন। চলতি বছরে ভারতীয় নৌবাহিনীকে সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্য প্রায় ১০০ টি জাহাজ মোতায়েন রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

বৈশ্বিক এই সম্মেলনে ভারত সরকারের সুপ্রিমো বলেন, “জাতীয় বিচারব্যবস্থার বাইরেও আমরা জৈব-বৈচিত্র্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। তাই চলতি বছরেই একটি আইনগত বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি আশা করি আমরা।”

গতকাল এই প্লাস্টিক নির্মূলে ভারতের পাশ হওয়া প্রস্তাবটি আইনে পরিণত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি -তে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য দূষণ মোকাবেলায় একটি রেজোলিউশন তৈরি করেছিল ভারত। তখনও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ভারত।

প্রসঙ্গত, ভারতে চলতি বছরের ০১ জুলাই থেকে একক ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক