ভারতের প্রতি চীনের নীতি, উদ্দেশ্য এবং বৈরিতা সত্ত্বেও এই ইস্যুতে কতিপয় বিশেষজ্ঞের সমালোচনা করার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতগণ।

দেশের অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবলম্বন করা পররাষ্ট্রনীতির ক্রমাগত সমালোচনাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতদের কয়েকজন। ০৩ জুন, বৃহস্পতিবার, দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সমন্বয়ে গড়া একটি সংগঠনের কয়েকজন মিলে উপরোক্ত বিষয়ে নিজেদের উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরেন। নিবন্ধটি লিখেছেন, প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কানওয়াল সিবাল, শ্যামলা বি কৌশিক, বিনা সিক্রি এবং ভাস্বতী মুখার্জী।



সাবেক এই কূটনৈতিকদের ভাষ্যমতে, “মোদী সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে যারা ভ্রু কুচকাচ্ছেন, তাঁরা বিগত ইউপিএ এবং এনডিএ সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সামঞ্জস্য গুলোও উপেক্ষা করে চলেছেন।”



লেখকগণ স্মরণ করিয়ে দেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ভারতকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করে। ফলশ্রুতিতে ভারতের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে কৌশলগত আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় মার্কিন প্রশাসন। পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে মনমোহন সিং সরকারের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। আর বর্তমানে মোদী সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শিখরে রয়েছে।



এসময় পাকিস্তানের সঙ্গেও অচলাবস্থার জন্য পূর্বের সরকার গুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন প্রাক্তন কূটনৈতিকগণ। তাছাড়া, সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নতুন মিত্র তৈরী করলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসেনি বলেও অভিমত দেন তাঁরা।



পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইউপিএ আমলে তৈরী হওয়া মিত্রতা মোদী সরকারের আমলে চমৎকার পর্যায়ে পৌছেছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেসব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যাক্তিগত চমৎকার রসায়নকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে আখ্যা দেন এই বিশেষজ্ঞগণ।



অন্যদিকে, প্রাক্তন কূটনৈতিকদের এই অংশ মনে করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বিধান এবং আশিয়ান ভূক্ত প্রতিবেশীদের সঙ্গেও সম্পর্কের দ্রুত উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্বসুরীদের ছাপিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।



সম্প্রতি মে মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ১৬ তম ভারত-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপের ২৭ টি দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে মুক্ত বাণিজ্য, চুক্তি, বিনিয়োগ, ভৌগলিক সূচক, অভিবাসন সহ নানান বিষয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যে আলোচনা হয়েছে এবং আলাদাভাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যে রোডম্যাপ-২০৩০ স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা ২০১৩ সালের পর ভারতের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে বলে মনে করেন প্রাক্তন পররাষ্ট্র দূতগণ।



প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকান্ড এবং ব্যাক্তিত্বের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে যেভাবে নিজেকে কার্যকর প্রমাণ করেছেন, তা প্রবাসীদের মনেও সাহসের সঞ্চার করেছে, পাশাপাশি ভারতকেও এনে দিয়েছে সম্মানের এক বাড়ন্ত বার্তা। তাই তাঁর গৃহীত পররাষ্ট্রনীতিতে অহেতুক সমালোচনার কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞগণ।



তবে প্রাক্তন এই রাষ্ট্রদূতগণের মতে, ভারতের জন্য মূল চিন্তার বিষয় হচ্ছে, চীন। চীনের নীতি, উদ্দেশ্য এবং ভারতের প্রতি বৈরিতা নিয়ে সকলের মনযোগ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।



কিন্তু, চীন ইস্যুতে মোদী সরকারের সমালোচনার প্রেক্ষিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতগণ বলেন, “সাবেক ইউপিএ সরকার যদি ডেপসাং ইস্যু বেমালুম ভুলে গিয়ে, ঘটনাটিকে ভারত-চীন সম্পর্কে বিষফোঁড়া হিসেবে আখ্যা দিয়ে সাফাই গাইতে পারে, তাহলে পূর্ব লাদাখের মত অঞ্চলে সংঘাত এড়িয়ে কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানে সচেষ্ট মোদী সরকারকে কেনো সমালোচনার মুখে পড়তে হবে?”



সাম্প্রতিককালে ভারত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা কিংবা ইস্যুতে নিজেদের যেভাবে ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে তুলে ধরছে, সে বিষয়টিও তুলে আনেন নিবন্ধ প্রকাশকগণ।



বিজেপি নিজেদের বৈদেশিক নীতিকে ঘরোয়া রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করছে, এমন সমালোচনার জবাবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রাক্তন এই কূটনৈতিকগণ বলেন, “কোনো দেশের সরকারই নিজেদের বিদেশ নীতি এবং দেশীয় নীতির মধ্যে বৈপরিত্য প্রদর্শন করে না।”



প্রকাশিত নিবন্ধটিতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রশ্নে রাজনীতিকদের অনৈক্যের বিষয়টি নিয়ে আফসোস প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁরা বলেন, “এমন এক সময়ে যখন আমাদের দেশ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইরত, তখন সরকারের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সহায়তার বদলে একটি অংশ অব্যহত সমালোচনায় মগ্ন। তাঁরা দেশে বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ব্যস্ত।”



নিবন্ধের শেষে, জাতীয় বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে, সঙ্কট মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতগণ।