দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষ জোর গলায় দাবি করছে যে, দেশটিতে চলমান বর্তমান সহিংসতার সম্পূর্ণই উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপরাধমূলক কর্মকান্ড; রাজনৈতিক বা জাতিগত নয়।

সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতারের পর ব্যপক হারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে। এর প্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার।



ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্কের সূত্র মতে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার, ১৫ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ নালোদি পান্ডোরের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।



এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে ভারতে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার জোয়েল সিবুসিসো দেদেবেলের সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সঞ্জয় ভর্ট্টাচার্য।



তবে, সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ আশ্বস্ত করা হয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে তাঁরা এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও শান্তি পুনরুদ্ধার করাই তাঁদের অগ্রাধিকার। শীঘ্রই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে তাঁরা।



তবে ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বসতি এবং ব্যবসায় লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের যে রিপোর্ট সম্প্রতি সামনে আসছে, সে বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান কর্তৃপক্ষ।



উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমা। দেশটির সংগ্রামী মহানায়ক নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে দুই মেয়াদে ১৮ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন জুমা।



ক্ষমতার শেষ মেয়াদে নিজ দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) থেকে রাষ্ট্রপতি জুমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এক পর্যায়ে সংসদে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হন জ্যাকব জুমা। এরপর দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জুমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে দায়ের হয় ১৯টি মামলা। দুর্নীতির এসব মামলা তদন্তের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি রেমন্ড জন্ডুর নেতৃত্বে গঠন করা হয় তদন্ত কমিশন।



দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জুমার বিরুদ্ধে জন্ডু কমিশনের তদন্ত চলে আসছিল। গত মার্চ মাসে তদন্ত কমিশনের সামনে হাজির হওয়ার জন্য জ্যাকব জুমাকে আদালত নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু সাবেক এ রাষ্ট্রপতি শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা কলাকৌশল অবলম্বন করে তদন্ত কমিশনের সামনে সর্বশেষ নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়নি তদন্ত কমিশনে। তদন্ত কমিশনে হাজির না হওয়ায় ইতোপূর্বে জুমার বিরুদ্ধে আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছিল কিন্তু জুমা আদালতে সমনের কোনো জবাবও দেয়নি।



তদন্ত কমিশনে হাজির না হওয়া, সমনের জবাব না দেওয়াকে আদালত অবমাননা হিসেবে আমলে নিয়ে গত ২৯ জুন সাবেক এ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ১৫ মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। আদালত রায়ে ৫ম কর্মদিবসের মধ্যে জ্যাকব জুমাকে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনের সহযোগিতায় কারাবরণের নির্দেশ দেন। কিন্তু জ্যাকব জুমা করোনা পরিস্থিতিতে কারাগারে গেলে নিজের মৃত্যু হবে এমন দাবি তুলে কারাগারে না গিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন দায়ের করেন।



সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জুমার আপিল আবেদনটি আদালত নাকচ করে দিলে জুমা তার আইনজীবীদের পরামর্শে বৃহস্পতিবার রাতে নিজে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তার সমর্থক, আইনজীবীসহ বিশাল গাড়িবহর নিয়ে দেশটির কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশের ওয়েস্টবিল কারাগারে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন তিনি।



এদিকে, জুমার মুক্তি আন্দোলনে জড়িত কৃষ্ণাঙ্গ লুটপাটকারীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে দেশটির পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। গত পাঁচ দিন ধরে চলে আসা আন্দোলনে এই পর্যন্ত ৭২ জন কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বেসরকারি সিকিউরিটির গুলিতে এসব আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন।



গত বুধবার প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জোহানেসবার্গে ১৯ জন ও ডারবানে ৫৩ জন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আন্দোলনকারীদের গুলিতে দুইজন সোমালিয়ান নাগরিক খুন হয়েছেন এবং ৩ সোমালিয়ান গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলন থামাতে সেনা মোতায়েন করলেও জুমা সমর্থকরা এসবের তোয়াক্কা না করে নতুন নতুন এলাকায় হামলা ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে।