তালেবানদের মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান, অভিযোগ আফগান রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতির।

আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দেশটির সরকার ও তালেবান প্রতিনিধি দলের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত সংলাপ কোনো প্রকার সমাধানে পৌঁছানো ছাড়াই শেষ হয়েছে। তবে কোনো প্রকার মীমাংসায় পৌঁছানো পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে গত রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে জানায় দুই পক্ষের প্রতিনিধি দল।



এদিকে, প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে সহিংসতা বন্ধ কিংবা যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত কিছুর উল্লেখ না থাকায় হতাশা দেখা দিয়েছে আফগান সাধারণ জনগণের মাঝে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজনৈতিক মীমাংসার অভাবে আফগান বাহিনী এবং তালেবানদের মধ্যে ভয়াবহ লড়াই শুরু হয়েছে। দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা বাহিনী।



এমতাবস্থায়, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সকল ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টোলারেন্স’ এর বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।



সোমবার, ১৯ জুলাই, আফগান সরকারের এক টুইটবার্তায় জানানো হয়, “আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা বাহিনী গত ২৪ ঘন্টায় নানগারহার, গজনী, কান্দাহার, জোজ্জন, সর-পোল, ফরিয়াব, বালখ, হেলমান্দ, তাখার এবং কুন্দুজ প্রদেশে অভিযান চালিয়ে ২৩৩ তালেবান জঙ্গি নিধন করেছে এবং অভিযানে ৮৮ তালেবান সন্ত্রাসী আহত হয়েছে। এছাড়াও, প্রায় ১৫ টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) শণাক্ত এবং অপসারন করা হয়েছে।”

টুইট লিঙ্ক: https://twitter.com/MoDAfghanistan/status/1416991286557556736?s=20



এদিকে, পাকিস্তানে আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়ের অপহরণ হওয়ার ঘটনায় ইসলামাবাদ থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে আফগান সরকার, যা পাকিস্তানের উপর দেশটির সরকারের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের পরিচায়ক।



প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার, অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কিছু সন্ত্রাসী পাকিস্তানে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কন্যা নাজিব আলিখিলকে অপহরণ করে। অপহৃত নাজিবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো সন্ত্রাসীরা। কয়েক ঘন্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে পাক কর্তৃপক্ষ।



আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তান এর মধ্যকার সাম্প্রতিক দূরত্বের বিষয়টি গত সপ্তাহে নতুন মাত্রা পায়, যখন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতি উভয়েই তালেবান ইস্যুতে পাক প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে বিবৃতি দেন। আফগানিস্তানে তালেবান জঙ্গিদের মদদ দান এবং আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে পাকিস্তানকে রীতিমতো ধুয়ে দেন আফগান নেতৃত্ব।



গত শুক্রবার, উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অনুষ্ঠিত ‘মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগ: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক দুই দিন ব্যাপী সম্মেলনে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ‘পাকিস্তানের নেতিবাচক’ অবস্থানের সমালোচনা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। দেশটিতে চলমান সংঘাতে তালেবানকে সরাসরি সহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেন ইমরান খানের দেশের বিরুদ্ধে।



এছাড়াও, গত বৃহস্পতিবার, আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ তালেবানকে সমর্থন জোগানোর ক্ষেত্রে পাক বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। এ বিষয়ে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান তিনি।



'আফগানিস্তানে প্রকৃত দ্বৈত শান্তি প্রয়োজন’



একদিকে যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক তলানীর দিকে যাচ্ছে, অন্যদিকে আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত দেশটিতে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের প্রশ্নে নিজেদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।



ইতোপূর্বে, গত মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ভারত জানায়, “আফগানিস্তানের টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত দ্বৈত শান্তি প্রয়োজন। অর্থাৎ আফগানিস্তানের আভ্যন্তরীণ শান্তি এবং আফগানিস্তানের চারপাশেও শান্তি।” দেশটিতে ব্যপক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহবান জানান ভারতীয় মন্ত্রী।



গেলো সপ্তাহে আফগান রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মূলত আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। এছাড়াও, সাম্প্রতিক উজবেকিস্তান সম্মেলনের পর আফগান শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মার্কিন উপ-জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা এলিজাবেথ শেরুড রান্ডাল এবং আফগানিস্তানে মার্কিন প্রতিনিধি জালময় খলিলজাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন জয়শঙ্কর। একই সঙ্গে, কাজাখস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুখতার তাইলুবারদীর সঙ্গেও আফগান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।



সার্বোপরি, আফগানিস্তানের আন্তঃসীমান্ত অঞ্চল সহ সকল ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টোলারেন্সের আহবান জানান জয়শঙ্কর। এমনকি, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ এবং অর্থায়নকারী গোষ্ঠীরও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।



প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানে গত দশক কাল সময় ধরে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত। তালেবান কর্তৃক আফগান দখলে এ বিষয়টি রীতিমতো শঙ্কার সম্মুখীন। তবে ভারত এরচেয়েও বেশি যে বিষয় নিয়ে আশঙ্কা করছে, তা হলো, তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর এর বেশ কিছু ভূমি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।