নিজ দেশে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় প্রতিবেশীদের পাশে থাকতে সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা করেছে ভারত।

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার দরুণ মহামারী সৃষ্টির পর থেকেই থমকে গিয়েছে মানবসভ্যতা। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমূহ করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারলেও বেকায়দায় পড়ে উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র পীড়িত অঞ্চলের মানুষজন।

তৃতীয় বিশ্বের এসব দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উৎকর্ষ সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যে কয়টি রাষ্ট্র, তাঁদের মধ্যে ভারত অন্যতম শীর্ষে অবস্থানকারী। করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ, বিশেষত সার্ক ভূক্ত মিত্র দেশগুলোতে মাস্ক, করোনা টেস্ট কীট থেকে আরম্ভ করে তরল মেডিকেল অক্সিজেন কিংবা ভ্যাকসিন পাঠানো সহ সম্ভব সকল ধরণের সহযোগীতা করেছে ভারত।

এমনকি নিজ দেশে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বরাবরই বলে এসেছে যে তাঁরা ‘ভাসুদাইভা কুটুম্বকম’ -মন্ত্রণায় বিশ্বাসী এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। তাই সাম্প্রতিককালে প্রতিবেশীদের স্বার্থ রক্ষায় বরাবরই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে দেশটি।

মহামারী মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়াস স্বরূপ সম্প্রতি সার্ক দেশগুলোর নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। গত ১৫ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক বৈঠকে মিলিত হোন তাঁরা। সেসময় সার্কভূক্ত দেশগুলোর জন্য একটি জরুরী তহবিল গঠনের প্রস্তাবও করেন মোদী।

শুধু প্রস্তাব দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। সার্কের জরুরি তহবিল গঠন করতে ভারতের পক্ষে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার প্রাথমিক প্রস্তাবও দেন তিনি। জরুরী এই তহবিলের ব্যয়ের খাত হিসেবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চায়ন, করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কীট উৎপাদন, অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করণ সহ নানা বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদীর স্বদিচ্ছার সর্বোচ্চ প্রতিফলন দেখা যায় মিত্র রাষ্ট্রসমূহে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন উপহার দেয়ার মাধ্যমে। বিশ্বের প্রায় ১৫০ টির বেশি দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি পাঠানোর মাধ্যমে বিশ্বের ফার্মেসী হিসেবে স্বীকৃতি পায় ভারত।

ভারত যেভাবে সার্ক ভূক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মহামারী মোকাবেলায় পাশে থেকেছে, তাঁর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতেই আজকের এ প্রতিবেদন। নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলোঃ

নেপালঃ করোনা মহামারী মোকাবেলায় হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান করা রাষ্ট্রটিতে বহুল সুবিধা প্রদান করে ভারত সরকার। এমনকি গতকালও (বৃহস্পতিবার) দেশটিতে ৯৬০ এলপিএম সক্ষমতার একটি মেডিকেল অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রেরণ করেছে ভারত।

এছাড়াও, গত এপ্রিল মাসেও দেশটিতে ২৩ টন ওষুধ এবং বিভিন্ন টেস্টিং কীট পাঠায় ভারত। এরপর মে মাসেও নেপালকে নিজ দেশে তৈরী ৩০,০০০ (আরটি-পিসিআর) টেস্ট কিট প্রদান করে। একই সঙ্গে জুন মাসেও নেপালী সেনাবাহিনীকে প্রায় ১৮ কোটি টাকার বেশি সমমূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশঃ বাংলাদেশকে প্রায় ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার প্রদান সহ প্রায় ২০ টন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দেয় ভারত। এছাড়াও, বাংলাদেশকে প্রায় ১০৯ টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত, যার মধ্যে প্রায় ৭১ টি অ্যাম্বুলেন্স ইতোমধ্যে ঢাকার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও, অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন সরঞ্জাম পাঠানো সহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে সেখানে।

এসবের পাশাপাশি সার্জিক্যাল মাস্ক, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ, কোভিড টেস্টিং কীট সহ নানান যন্ত্রপাতি ঢাকাকে উপহার পাঠায় দিল্লী।

শ্রীলংকাঃ শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে চলতি সপ্তাহেও কলম্বোকে ২৮০ টন তরল মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করে দিল্লী। এছাড়াও, মহামারীর শুরু থেকেই দেশটিকে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান এবং ভ্যাকসিন উপহারের মাধ্যমে দেশটির পাশে থেকেছে ভারত।

ভুটানঃ সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভূটানকেই সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন উপহার পাঠায় ভারত। এ যাবত দেশটিতে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি কোভিড ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে ভারত। এছাড়াও, জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ নানানভাবে দেশটির পাশে থেকেছে ভারত।

মালদ্বীপঃ মহামারীর শুরু থেকে মালদ্বীপের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। বছরের শুরুতেই দেশটিকে ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দেয় ভারত। এছাড়াও, খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্যাকসিন বিক্রয়ের বিষয়েও চুক্তি হয় দু দেশের মধ্যে। এসবের পাশাপাশি দেশটিতে প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আর্থিক সহায়তা চুক্তিও করে দেশটি।

সর্বোপরি, সার্কভূক্ত মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সার্বিকভাবে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে ভারত।