মহাকাশ খাতে সম্পর্ক এবং যৌথ অংশীদারিত্ব জোরদারে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং।

ভারত ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাজারে অতি শীঘ্রই কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মহাকাশ দপ্তর মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। পাশাপাশি মহাকাশ খাতে সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং যৌথ অংশীদারিত্ব জোরদারে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।



সম্প্রতি এফআইসিসিআই আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া লিডস -২০২১’ -শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য প্রদানকালে মন্ত্রী বলেন, “ভারতে ছোট স্যাটেলাইট বাজার আগামী ২০২৭ সাল নাগাদ প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে ধারণা করছি।”



তিনি আরও বলেন, “চন্দ্র অভিযান, কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ, বিদেশী উপগ্রহ বহন এর ক্ষেত্রে ভারতের মান্যতা সর্বজন স্বীকৃত। বিশ্ব দেখেছে, মঙ্গলগ্রহেও আমরা যান পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেখানে কয়েক বছর আমাদের যাত্রা অব্যহতও ছিলো।”



এসময় মিত্র রাষ্ট্র সমূহের প্রতি যৌথ উদ্যোগ এবং অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জোরালো আহবান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ গুলোর হাতে ন্যানো এবং মাইক্রো-স্যাটেলাইটের নকশা ও উৎপাদনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অপটিক্স, রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম, অপটিক্যাল কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং অন-বোর্ড ডেটা হ্যান্ডেলিং ম্যানুভারিং সহ বিভিন্ন দক্ষতা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের এসব দেশগুলো ভারতের সঙ্গে মিলে কাজ করলে প্রযুক্তিগত ভাবে বিশ্ব নতুন কিছুর সন্ধান পাবে বলে বিশ্বাস করি।”



এক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষাবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা এবং স্টার্ট আপ সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন আশা করেন মন্ত্রী। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণেও এটি ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত দেন তিনি।



এসময় রিমোট সেন্সিং খাতের বিষয়েও আলোচনা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এক সময় রিমোট সেন্সিং খাতে বিশ্বের পথ প্রদর্শক ছিল অস্ট্রেলিয়া। বর্তমানে অনেক দেশই এই খাতে অগ্রগতি করেছে। যদি ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো এবং ভারতীয়রা মিলে এই খাতে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয়, তবে নিঃসন্দেহে সেরা আউটপুট বের করতে পারবে।”



১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য স্যাটেলাইটের ডেটা ক্রমাঙ্কন এবং লেজার রেজিং চুক্তি হয় বলে স্মরণ করেন মন্ত্রী। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ভারতীয় কাউকে মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাথে ভারতের ইসরো যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।



এসময় মহাকাশ শিল্পকে বিগত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে উল্লেখ করেন মন্ত্রী সিং। ন্যানো, মাইক্রো এবং মিনি স্যাটেলাইট এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এবং ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বাজার ক্রমাগত বড় হচ্ছে বলে জানান তিনি।



তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ক্রমাগত নিজেদের প্রসার বাড়াচ্ছে বলে জানান তিনি। রিমোট সেন্সিং, বায়ুবাহিত সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার, মেরিটাইম ডোমেইন সচেতনতা, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, উৎক্ষেপণ পরিষেবা, মহাকাশ অনুসন্ধান, মহাকাশ আইন এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ভারত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক সই করছে বলেও জানান মন্ত্রী।



এসময় শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মহাকাশ শিল্পে ভারতের বিভিন্ন অবদান ও অর্জনও তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি জানান,

* ভারতের প্রথম মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ASTROSAT, মহাকাশে চার বছর পূর্ণ করেছে এবং পৃথিবীর ২৪ টি দেশের প্রায় ৯০০ নিবন্ধিত ব্যবহারকারী এর সুবিধাদি উপভোগ করছেন।

* ২০১৭ সালে একসঙ্গে শতাধিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড করে ভারত।

* ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎক্ষেপণ যান, জিএসএলভি-এমকে (III) জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটে (জিটিও) ৪ টন ওজনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম।



এছাড়াও, ১০৯ টি মহাকাশ যান মিশন, ৭৭ টি লঞ্চ মিশন, ১০ টি পরীক্ষামূলক উপগ্রহ, ৩১৯ টি বিদেশী উপগ্রহ নিয়ন্ত্রণ সহ নানা বিষয়ের কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।