চারদিনের সফরে শ্রীলঙ্কা রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ০৪ অক্টোবর, সোমবার, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব জোরদারের নানা ইস্যুতে মতবিনিময় করেন তাঁরা।



বৈঠক শেষে কলম্বোয় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন এক টুইটবার্তায় জানায়, “লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। দু দেশের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক আরও সুসংহত করার নানাবিধ উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।”



এর আগে কলম্বোতে টেম্পল ট্রিসে ভারতীয় সহযোগিতা প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় শ্রিংলা বলেন, “ভারত সবসময়ই একটি নিট নিরাপত্তা প্রদানকারী রাষ্ট্র। মানবিক সহায়তা ও দূর্যোগ-ত্রাণ কর্মকান্ড পরিচালনায় ভারত সর্বদাই অত্র অঞ্চলে সবচেয়ে অগ্রগণ্য।”



দেশটিতে অবস্থানকালে শ্রিংলা ক্যান্ডি, ত্রিনকোমালি এবং জাফনা এলাকায়ও পরিদর্শন করবে বলে সূত্রের খবর। এসময় ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক প্রকল্প সমূহ পর্যবেক্ষণ করবেন তিনি। চলমান কিছু প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, গলে ওয়ালহান্দুয়া এস্টেট নির্মাণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ৫০,০০০ ঘর নির্মাণ এবং এস্টেট শ্রমিকদের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ। এসব প্রকল্পে ভারত প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে।



এছাড়াও, জাফনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চলমান নির্মাণকাজ পরিদর্শন করবেন শ্রিংলা। এই কেন্দ্রটি ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লঙ্কান জনগণকে উপহার স্বরূপ প্রদান করেন।



প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে শ্রীলঙ্কার। ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির অন্যতম প্রধান মিত্র দ্বীপ রাষ্ট্রটি। ভারতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও অর্থায়নে দেশটিতে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লঙ্কা জুড়ে আবাসন প্রকল্প; রেললাইন আপগ্রেড এবং ট্র্যাক-লেইং; কেকেএস বন্দরের পুনর্বাসন; ডিকোয়ায় মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল; জাফনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র; মান্নারে তিরুকেতেশ্বরম মন্দির পুনরুদ্ধার; জরুরী অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু সহ প্রভৃতি।



তাছাড়া, বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে উভয় রাষ্ট্র একে অন্যের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে বহুদিন যাবত। দু দেশের মধ্যে উষ্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। গত বছর থেকেই উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ আরও গভীর হয়েছে নয়াদিল্লি ও কলম্বোর মধ্যে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার লঙ্কান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এসব বৈঠকে মূলত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ভারতীয় অর্থায়নে শ্রীলঙ্কায় গৃহীত প্রকল্প সমূহের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।



একই সঙ্গে, বিমসটেক, আইওআরএ এবং জাতিসংঘ সহ বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক ভূমিকা এবং স্বার্থের বিষয়েও আলোচনা করেন তাঁরা। খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব প্ল্যাটফর্মে নিকট প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার সমর্থন ভারতের একান্ত কাম্য।



এদিকে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। গত জানুয়ারীতে দেশটিতে সফর করেন তিনি। ইতোপূর্বে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “মহামারীর কারণে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী প্রথম নীতির আওতায় দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে আমরা স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা অব্যহত রেখেছি।”



পরবর্তীতে নয়াদিল্লীর ভ্যাকসিন মৈত্রীর অংশ হিসেবে প্রায় পাঁচ লক্ষ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পাঠানো হয় দ্বীপ দেশটিতে। পাশাপাশি এখনও নিয়মিত বিরতিতে মেডিকেল অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে সেখানে।



গত মে মাসেও কলম্বোর উপকূলে এমভি এক্সপ্রেস পার্লে আগুন লাগার পর তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং গোটা অঞ্চলকে দূষণ মুক্ত করতে ভারতের ভূমিকা অনবদ্য। এছাড়া, লঙ্কার সৌরশক্তি প্রকল্প খাতে ভারত ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার লাইন অব ক্রেডিট বাড়িয়েছে।



উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিব অ্যাডমিরাল প্রফেসর জয়নাথ কলম্বজের আমন্ত্রণে দেশটিতে সফর করছেন শ্রিংলা। চারদিনের সফরে দেশটিতে অবস্থান করছেন তিনি।