ভারত এবং ইতালি উভয় রাষ্ট্রই আইনের শাসন এবং বহুপাক্ষিকতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা

সম্প্রতি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইতালির রোম সফরে গিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি স্থানীয় ভারতীয় সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন ও ধর্মীয় প্রধানদের সঙ্গেও সাক্ষাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এরই মাঝে তাঁর এই ইতালি সফর নিয়ে ইতালির নামকরা পত্রিকা ‘কোরিয়ারে ডেলা সেরা’ -র জন্যে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।



‘জি-২০ তে মোদী: রোম ও দিল্লীর মধ্যকার সংযোগ’ -শিরোনামে লেখা নিবন্ধে পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা লিখেছেন, “যদিও প্রায় এক দশক পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফর করছেন, তথাপি জি-২০ তে ভারত ও ইতালির মধ্যকার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইতালি সফরে এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতের মানদন্ড নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের ইতালি সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”



অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক লিখেছেন, “প্রাচীন ভারত ও রোমের মধ্যে গভীর ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসের দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পারি, ভারতীয় সৈন্যগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালিকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছে এবং গৌরবোজ্জ্বল বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।”



ভারত ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্পর্কিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি জলবায়ু ইস্যুতে আন্তঃসম্পর্কিত বিষয়াদি এবং বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে ইতালিকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে বলে এই লেখনীতে জানিয়েছেন শ্রিংলা। এসময় আসন্ন কোপ-২৬ শীর্ষ বৈঠক এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তিনি।



শ্রিংলা লিখেন, “আধুনিক গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারত এবং ইতালি উভয় রাষ্ট্রই আইনের শাসন এবং বহুপাক্ষিকতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই অভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে সুবিধে পাচ্ছে দেশ দুটো। এই রাজনৈতিক বোঝাপড়া একটি গতিশীল এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অবকাঠামো এবং উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে ভারত ও ইতালির।”



ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরও লিখেছেন, “আমাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য গত বছর নভেম্বর মাসে পাঁচ বছর মেয়াদী যৌথ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের প্রাক্বাল অবধি গৃহীত এই কর্ম পরিকল্পনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর অবধি এই ক্ষেত্রগুলোতে সফলতা অর্জনের জন্য কাজ করা হবে।”



ইতালির সাময়িকীতে শ্রিংলা লিখেছেন, “ইউরোপে ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য অন্যতম বৃহত্তম গন্তব্য ইতালি। অন্যতম বৃহত্তম আবাসস্থলও বটে। ভারতের সঙ্গে ইতালির অংশীদারিত্বও দিনকে দিন বাড়ছে। ভারতের আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং দুর্যোগ প্রতিরোধী পরিকাঠামোর জোটের অন্যতম শরীক ইতালি। তাছাড়া, ভারতীয় ভ্যাকসিনকেও মান্যতা দিয়েছে ইতালি। স্বাস্থ্যসেবার উৎকর্ষ সাধনে নানাভাবে সহযোগিতাও করে আসছে ইতালি। তাই ইতালির সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে কেবলই উর্ধ্বমুখী হবে বলে বিশ্বাস রাখি।”



পরিবেশ রক্ষা ইস্যুতে শ্রিংলা লিখেছেন, “নবায়নযোগ্য শক্তি, জৈব জ্বালানী এবং সবুজ হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে সাহসী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত। কার্বন নিঃসরণ শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর আমরা। এমন সময়ে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ইতালীয় কোম্পানি আমাদের জ্বালানী প্রকল্প গুলোতে যুক্ত হয়েছে। ফলস্বরূপ জ্বালানী অংশীদারিত্বও ব্যাপকভাবে বেড়েছে ভারত ও ইতালির।”



আগামী ২০২৩ সালে ভারত জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার সময় জলবায়ু ইস্যুতে আরও জোরালো ভূমিকা নিবে বলেও জানান শ্রিংলা।



উল্লেখ্য, এবছর ইতালির সভাপতিত্বে ১৬ তম শীর্ষ সম্মেলন করছে জি-২০ ফোরাম। ভারত এই ফোরামটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ন্যূনতম কর ইস্যুতেও একটি সমাধান দিয়েছে জি-২০ ফোরাম। তাই মহামারীর দীর্ঘ ছায়া থেকে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য খাতকে উদ্ধার করতে এবারের সম্মেলনটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সাময়িকীতে লিখেছেন শ্রিংলা।



এসবের পাশাপাশি এসডিজি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের লক্ষ্য পূরণে ভারত ও ইতালি সম্মিলিতভাবে কাজ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শ্রিংলা। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, শক্তির রূপান্তর, জ্বালানী খাত, অভিবাসন সহ অন্যান্য ইস্যুতে ইতালি ভারতকে সমর্থন অব্যহত রাখবে বলেও অভিমত দেন শ্রিংলা।



সর্বোপরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সম্পর্ক গভীর করতে এবং বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে ভারত ও ইতালি একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে বলে প্রকাশিত লেখনীতে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শ্রিংলা।