ভারত আফগানিস্তানে জরুরী মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেছে।

আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা ত্বরান্বিত করতে তালেবানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত ২২ ডিসেম্বর, বুধবার, এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তালেবানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এতে সমর্থন দিয়েছে ভারত সহ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের সকলেই।

নিরাপত্তা পরিষদের এ প্রস্তাব অনুসারে, আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যে সকল কর্মকাণ্ড চলছে, তার জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে তালেবানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। এ কারণে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে অর্থায়নে জন্য তহবিল গঠন করা যাবে। অর্থাৎ, আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা তহবিলের জন্য অর্থ প্রদান বা অন্যান্য অর্থনৈতিক সহায়তা করা বৈধ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রস্তাবের সমর্থনে জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেন, “আফগানিস্তানের বৃহত্তম আঞ্চলিক উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে ভারত নিজেদের অন্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় করতে ইচ্ছুক, যাতে তারা অত্যধিক প্রয়োজনীয় সহায়তার দ্রুত ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়। আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা এমন প্রতিবেদন দেখেছি যাতে বোঝা যায় যে, অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা তীব্র খাদ্য সংকট বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। এই ভয়ানক অবস্থা মোকাবেলা করতে জরুরী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। দেশের বেশিরভাগ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাচ্ছে। তাই আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্যের বাঁধাহীন প্রবেশাধিকার দিতে হবে।”

অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক আরও বলেন, “ইতোমধ্যে শীতকাল চলে এসেছে। জরুরীভাবে সাহায্যের পরিমাণ না বাঁড়াতে পারলে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। তাই জাতিসংঘ এবং অন্য সংস্থাগুলোকে বাধাহীন কাজ করার অ্যাক্সেস দিতে হবে।”

এসময়, মানবিক সহায়তা নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন নীতির উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিরুমূর্তি। তিনি বলেন, “ভিন্ন জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে সবারই অ-বৈষম্যহীন এবং পরিপূর্ণ মানবিক সেবা পাবার অধিকার রয়েছে। প্রথমে সবচেয়ে দুর্বলদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো উচিত, বিশেষ করে - নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘু।”

তবে এসবের পাশাপাশি তহবিলের সুষ্ঠু সঠিক দেখভাল করার বিষয়টিও নিরাপত্তা পরিষদকে তদারকি করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিরুমূর্তি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অন্য যে সকল কর্মকাণ্ড চলছে তা ত্বরান্বিত করতে দেশটির ওপর থেকে জাতিসংঘে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, “এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করার ফলে আফগানিস্তানের বহু মানুষের জীবন রক্ষা হবে।”

খোদ জাতিসংঘের মতে, “আফগানিস্তানে দু কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন রক্ষার্থে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান করা দরকার। কারণ, আফগানিস্তানের অর্থনীতি চোখের সামনেই ধ্বংস হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেশটিতে প্রায় ১.৬ মেট্রিক টন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে ভারত। গত ১১ ডিসেম্বর, শনিবার, একটি বিশেষ ফ্লাইটে কাবুলে উক্ত পরিমাণ চিকিৎসা সহায়তা সামগ্রী পাঠায় ভারত। এই ওষুধ সামগ্রী কাবুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং সেখানকার ইন্দিরা গান্ধী শিশু হাসপাতালে প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে দেশটির তালেবান নেতৃত্ব। পাশাপাশি ভারত-আফগানিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তাঁরা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক