জম্মু ও কাশ্মীরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জঙ্গিবাদের বিকাশকে কঠিন করে তুলেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যখন সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্য মর্যাদা বাতিল করলো, তখন চারিদিকে সমালোচনার বান বয়ে যায়! দেশের অভ্যন্তরেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতার সম্মুখীন হয় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি। তবে সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিলো, সেটি প্রমাণ হতে দেরী লাগেনি। সাম্প্রতিক খবরের কাগজে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরে প্রথমবারের মতো জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্যে এসে যুবকদের জঙ্গিবাদের অংশ না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর কোনো তরুণ যেনো জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।

এটি নিঃসন্দেহে এক দারুণ অর্জন। এমনিতেও জম্মু ও কাশ্মীরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জঙ্গিবাদের বিকাশকে কঠিন করে তুলেছে। যেসব তরুণ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মিলিশিয়া গ্রুপে যোগ দেয়, প্রায়শই বিপাকে পড়ে তাদের পরিবার। সামাজিকভাবে ব্যাপক হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় তাদের। তাছাড়া, যখন এসব তরুণেরা পুলিশে ধরা পড়ে কিংবা নিহত হয়, তখন তাদের জঙ্গি সংগঠন গুলো কোনো প্রকার সাহায্য বা সহানুভূতি নিয়ে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায় না। বরং, আইনি জটিলতায় ফেঁসে যায় গোটা পরিবারের সদস্যবর্গ। এমতাবস্থায়, পরিবার গুলো যে অন্য তরুণদের ভবিষ্যত বাঁচাতে প্রকাশ্যে এমন অবস্থান নিয়েছে, সেখানে মোদী সরকারের কৃতিত্ব নেহায়েত কম নয়।

এই তথ্যটি ভাইরাল হয় শ্রীনগরের অন্যতম প্রধান এলাকা হায়দারপোরায় সম্প্রতি ১৫ নভেম্বর এনকাউন্টারে নিহত জঙ্গির স্ত্রী রাজিয়া বিবির এক সাক্ষাৎকারে। সেখানকার টাইমস নাউ টেলিভিশন চ্যানেলকে রাজিয়া জানান, “কাশ্মীরের যুবকেরা ইসলামাবাদের এজেন্টদের দ্বারা বিপথগামী হচ্ছে। আমরা ভূক্তভোগী পরিবার গুলো অন্য তরুণদের এসব কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই।”

গোটা বিবৃতিতে আসলে জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান বাস্তবতাই ফুটে উঠেছে। অত্র অঞ্চলের মানুষই বর্তমানে সীমান্তের ওপাড় থেকে পরিচালিত হওয়া সন্ত্রাস ও সহিংসতার উপর বিরক্ত। কঠোর নিয়ম-নীতি, নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে অঞ্চলজুড়ে জঙ্গিদের স্বীয় জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। তাছাড়া, গত দু বছরে প্রচুর জঙ্গি নিহত হচ্ছে সরাসরি যুদ্ধে। তাই স্বভাবতই সাধারণ মানুষও এই অশান্ত পরিস্থিতির সমাধান চায়।

কাশ্মীরের আইজিপি বিজয় কুমারের মতে, “শুধুমাত্র ২০২১ সালে ১৭১ জন জঙ্গী নিহত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। কিন্তু এখনও ১৬৮ জন জঙ্গী সক্রিয় রয়েছে। তবে প্রায় সমস্ত শীর্ষ জঙ্গি কমান্ডার নিহত হয়েছে। মাত্র চারজন শীর্ষ কমান্ডার কাশ্মীরে সক্রিয় রয়েছে।”

এছাড়া, গত ২০২০ সালে প্রায় ২২৫ জঙ্গি নিহত হয়েছিলো এবং প্রায় ৪৭ টি সংগঠনের শীর্ষ কমান্ডার আটক কিংবা নিহত হয়েছিলো বলে জানান তিনি। এর পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৫ কোরের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি পি পান্ডে গত ৩০ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রথমবারের মতো স্থানীয় জঙ্গীদের সংখ্যা ১০০’র নিচে নেমে এসেছে। উপত্যকায় এই সংখ্যা ৮৫ বা ৮৬ হতে পারে।”

কাশ্মীরের আইজিপির মতে চলতি বছর ১২৮ জনের মতো তরুণ জঙ্গি দলে যোগ দিয়ে থাকতে পারে, তবে এর মাঝে প্রায় ৭৩ জন নিহত এবং ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিনকে দিন জঙ্গিদের এই সংখ্যা কমার বিষয়টিকে কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের নিরাপত্তায় বিশেষ অগ্রগতি হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর, ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষকে জানিয়েছিলেন, “জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় অভিযানের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা গ্রিড তৈরি করা হয়েছে। গত দুই বছরে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।”

পরিশেষে, পেছনের কারণ যাই হোক না কেনো, জম্মু ও কাশ্মীরের আঞ্চলিক নিরাপত্তার উন্নতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যেই নিঃসন্দেহে মঙ্গলজনক। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক