ভারত ও কম্বোডিয়ার কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বর্তমানে এক গভীরতর অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে

ভারত নিজেদের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে কম্বোডিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীরতর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। গত ২৫ জানুয়ারী, মঙ্গলবার, কম্বোডিয়ার পুলিশ একাডেমির কর্মকর্তাদের জন্য কাস্টমাইজড ট্রেনিং প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

নিজ ভাষণে সৌরভ বলেন, “আমরা গর্বিত যে কম্বোডিয়াকে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পেয়েছি। আসিয়ান সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক, ভারত-কম্বোডিয়া-লাওস-মায়ানমার-ভিয়েতনাম সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক এবং মেকং-গঙ্গা সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কে আমরা কম্বোডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে পাশে পেয়েছি।”

এসবের পাশাপাশি ভারত ও কম্বোডিয়ার কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বর্তমানে এক গভীরতর অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উল্লেখ্য, চলতি বছর দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে কম্বোডিয়া।

এছাড়া, ২০২২ সালেই সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে ভারত-আসিয়ান অংশীদারিত্ব। তাই এই বছরটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। চলতি বছর আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে চলেছে কম্বোডিয়া। তাই দেশটির প্রতি শুভকামনাও জানান ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের এই সচিব।

এদিকে, কম্বোডিয়ার পুলিশ একাডেমির কর্মকর্তাদের জন্য কাস্টমাইজড ট্রেনিং প্রোগ্রামটি ভারতের দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠান দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেগুলো যথাক্রমে, ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

এর আগেও কম্বোডিয়ান পুলিশের জন্য কাউন্টার টেরোরিজম এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক কাস্টমাইজড কোর্স পরিচালনা করেছে ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। এখনও অবধি কম্বোডিয়ার প্রায় ২২০০ নাগরিক ভারতে বা ভারত সরকার কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ পূর্বক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।

প্রসঙ্গত, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি সেই বিশেষ কর্মকৌশল, যার মাধ্যমে ভারত আশিয়ানভূক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি জাপান, ভিয়েতনাম আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাস্তব সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজেদের অর্থনৈতিক উত্থান নিশ্চিত করতে চায়। তবে এখন তা রাজনৈতিক, কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক মাত্রা পেয়েছে।

দেশীয় ক্ষেত্রে ভারত সরকার কর্তৃক সড়ক, রেল, অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহন, বিদ্যুৎ, বিমান বন্দর এবং টেলিকম সংযোগের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জটিল পরিকাঠামোগত প্রকল্প সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এই নীতির আওতায়।

চলতি বছর আশিয়ানের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্বের ৩০ তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। তবে বিগত এক দশক সময়কালে আশিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ভারত। বিগত ২০১০ সালে যেখানে আশিয়ানের সঙ্গে ভারতের রপ্তানী সম্পর্ক ছিলো ২৩ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে ২০১০ সালে ভারত যেখানে আশিয়ান অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার আমদানী করতো, সেখানে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আমদানী করে থাকে প্রতি বছর। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক