চাবাহার বন্দরে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের জন্য ভারতের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো।

মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রথম সামিটে বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সামিটকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বাণিজ্যের পথকে আরও বিস্তৃত করা এবং আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এই ভার্চুয়াল সামিটে।

বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “একটি ব্যাপক যৌথ ঘোষণা গৃহীত হয়েছে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বের দ্বারা, যা একটি স্থায়ী এবং ব্যাপক ভারত-মধ্য এশিয়া অংশীদারিত্বের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।”

বক্তব্যের প্রথমেই মোদী জানিয়েছেন, “আফগানিস্তানের ঘটনার পরবর্তী ক্ষেত্রে ভারত ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।” আগামী বছরগুলোতে ভারত ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে কাজ করার জন্যই সম্মলনের আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

মোদী বলেন, ভারত ও মধ্য এশিয়ার পরস্পরকে সাহায্য করার মাধ্যমেই আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করবে। এসময়, চাবাহার বন্দরে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের জন্য ভারতের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো।

এদিনের সম্মেলনে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। কোভিড পরিস্থিতির জেরে এই বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। কিন্তু ভার্চুয়াল সামিটে পাঁচটি দেশের তরফে তাদের প্রেসিডেন্টরা সম্মলনে অংশ নেন।

কাজাখস্তানের কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, উজবেকিস্তানের শাভকাত মির্জিওয়েভ, তাজিকিস্তানের ইমোমালি রহমান, তুর্কমেনিস্তানের গুরবাংগুলি বারদিমুহামেদো এবং কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের সাদির জাপারভ সম্মলনে অংশগ্রহণ করেন। এই সামিটের মাধ্যমে আগামীদিনের রোডম্যাপের খসড়াও তৈরি হয়েছে।

এই প্রথম ভারত ও সেন্ট্রাল এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এই ধরনের সম্মলেনের আয়োজন করা হল। আয়োজিত প্রথম সম্মলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই সম্মেলন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার প্রতিফলন। মধ্য এশিয়ার দেশগুলো ভারতের বর্ধিত প্রতিবেশীদের একটি অংশ। ২০১৫ সালে মধ্য এশিয়ার সমস্ত দেশ সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরবর্তীকালে, ভারত ও দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে উচ্চ পর্যায়ে মতবিনিময় হয়েছে।”

এই দেশগুলোর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে যোগাযোগ গড়ে উঠেছে আগেই। সেটিকে বলা হচ্ছে ভারত-মধ্য এশিয়া ডায়ালগ। গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে তাদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। একদিকে চীনের চাপকে প্রতিহত করা ও অন্যদিকে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের পরবর্তী সময়ে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। মোদী হিন্দিতে বলেন, আফগানিস্তানে কী হচ্ছে সেটা আমরা সকলেই জানি। সেক্ষেত্রে সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা অত্যন্ত দরকারি।

তিনি বলেন ভারতের পক্ষ থেকে বলছি, সেন্ট্রাল এশিয়ার প্রতিবেশীর বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিরগিজস্তানে হাজারো ভারতীয় ছাত্র পড়াশোনা করে বলেও জানিয়েছে মোদী।

প্রসঙ্গত, এই সামিটের তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো। প্রথমত, ভারত ও মধ্য এশিয়ায় পারস্পারিক সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনিবার্য। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল, সহযোগিতার জন্য একটি কার্যকর পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। এর ফলে স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আলাপচারিতার সুযোগ স্থাপন হবে।

তৃতীয় উদ্দেশ্য হল, দেশগুলোর সহযোগিতার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এর মাধ্যমে ভারত ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আগামী ৩ বছরে আঞ্চলিক সংযোগের জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক