হিমাচল প্রদেশের মোনালি থেকে কেলং যাওয়ার জন্য তৈরি করা এই টানেলটি ভারতের প্রযুক্তিগত ও প্রকৌশল দক্ষতার অপূর্ব মিশ্রণ

ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় পূর্বেই নতুন ডানা যোগ করেছিলো ‘অটল টানেল’। এবার দেশের জন্য এক গৌরবময় সম্মানও বয়ে আনলো সুড়ঙ্গটি। অটল টানেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বের দীর্ঘতম হাইওয়ে টানেল’ -এর স্বীকৃতি দিলো ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস।

গত ০৯ ফেব্রুয়ারী, বুধবার, নয়াদিল্লীতে, এই ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল নির্মাণের কৃতিত্বের জন্য ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস থেকে সংস্থার তরফে শংসাপত্র গ্রহণ করেছেন বিআরও মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব চৌধুরী। পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক বিবৃতিতে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।

সমুদ্রতল থেকে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় এই টানেল তৈরি করা হয়েছিলো পিরপঞ্জাল পাহাড় কেটে। এত উচ্চতায় এটাই বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক-সুড়ঙ্গ। ৯.২ কিমি দৈর্ঘ্যের সুড়ঙ্গটি তৈরী করা হয়েছে ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) -এর তত্ত্বাবধানে। এই সুড়ঙ্গের ব্যবহারে মানালি এবং লে-এর মধ্যে দূরত্ব কমবে ৪৬ কিলোমিটার। ফলে আগের চেয়ে সময় কমপক্ষে চার ঘণ্টা কম লাগবে।

অশ্বক্ষুরাকৃতি এই টানেলে রয়েছে দুটি লেন। দু দিকেই রয়েছে ফুটপাত। রাস্তার প্রস্থ আট মিটার। ওভারহেড ক্লিয়ারেন্স ৫.৫২৫ মিটার। দৈনিক ৩০০০ ছোট চার চাকার গাড়ি এবং ১৫০০ ট্রাক ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিবেগে যাতায়াত করতে পারবে এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে।

২০০২ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরে টানেলের জন্য প্রথম বিস্ফোরণে পাথর ফাটানো হয়েছিল ২০১০ সালে। শেষ বার ব্লাস্ট ঘটানো হয় ২০১৭-এ। ‘নিউ অস্ট্রিয়া টানেলিং মেথড’ -এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুড়ঙ্গটি নির্মিত হয়।

১০ বছর ধরে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন তিলে তিলে তৈরি করেছে এই সুড়ঙ্গপথ। প্রতি ৫০ মিটার অন্তর রাখা হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নজরদারির উদ্দেশ্যে ২৫০ মিটার অন্তর বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। টানেলের অন্দরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।

আগুনের মোকাবিলার জন্য রয়েছে জলের পাইপলাইন এবং ৫০ মিটার অন্তর ‘ফায়ার রেটেড ডাম্পার’। টানেলের ‘সাউথ পোর্টাল’-এর অবস্থান মানালি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। ‘নর্থ পোর্টাল’-টি লাহুল উপত্যকার তেলিংয়ের সিসু গ্রামে।

এছাড়া, ভারতের প্রতিরক্ষার দিক দিয়ে ‘অটল টানেল’-এর অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তে রসদ পাঠানো থেকে সেনা মোতায়েন— সবই আগের চেয়ে অনেক অনায়াসে করা যাবে এই সুড়ঙ্গ স্থাপনের ফলে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক