ভারতের বার্ষিক পণ্যদ্রব্য রপ্তানী ৪৫.৮০% বৃদ্ধি পেয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ সালে প্রায় ২৫৬.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে

ভারতের সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানীর পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসেও প্রায় ৩৩.৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানী করেছে ভারত, অঙ্কের হিসেবে যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের (২৭.৬৩ বিলিয়ন ডলার) রপ্তানীর চেয়ে প্রায় ২২.৩৬ শতাংশ বেশি এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের (২৭.৭৪ বিলিয়ন ডলার) চেয়ে ২১.৮৮ শতাংশ বেশি।

গত ০২ মার্চ, বুধবার, এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে এক বিবৃতি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ৩৭৪.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। পরিসংখ্যানের হিসেবে বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪৫.৮০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি। উল্লেখ্য, ২০২০-২১ সালে ভারতের মোট রপ্তানী ছিলো ২৫৬.৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানী ছিলো ২৯১.৮৭ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে ভারতের পণ্যদ্রব্য আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে নয়াদিল্লী। ২০২১ সালের চেয়ে যা প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ৪০.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করেছিলো কেন্দ্রীয় সরকার। আর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই আমদানির পরিমাণ ছিলো ৩৭.৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে মোট ৫৫০.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করে ভারত। অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৩৪৫.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এসে দাঁড়িয়েছে ২১.১৯ বিলিয়ন ডলার এবং গোটা অর্থবছরে এই ঘাটতি হয়েছে মোট ১৭৬.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নন-পেট্রোলিয়াম রপ্তানির মূল্য ছিল প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে যা ছিলো ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই খাতে প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে রপ্তানী। ২০২০ সালের পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এই পরিমাণ।

আবার, একই বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নন-পেট্রোলিয়াম আমদানির মূল্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহেই জানা গিয়েছিলো, সাত বছরে ভারতের ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৮৮%। সংখ্যার হিসেবে যা প্রায় ১২,৪০০ মিলিয়ন ডলার। বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৮৮ শতাংশ বেড়েছে ভারতের ইলেকট্রিক পণ্য রপ্তানী।

মাত্র দু দশক পূর্বেও বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক পণ্যের নিট আমদানীকারক ছিলো ভারত। মোবাইল ফোন, আইটি হার্ডওয়্যার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স, অন্যান্য শিল্প ইলেকট্রনিক্স এবং অটো ইলেকট্রনিকস খাতে রপ্তানির বদলে আমদানির উপরই নির্ভরশীল ছিলো ভারত।

কিন্তু গোটা পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর থেকে। রপ্তানী খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে থাকে ভারত। এ নিয়ে এক বিশেষ টুইটে দেশটির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল লিখেছেন, “বিশ্ব ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রোডাক্ট চায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ও আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাঁড়াতে সাহায্য করছে।”

বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাণিজ্য রপ্তানী বৃদ্ধিতে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে মহামারী চলাকালীন রপ্তানি খাতের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভারত সরকারের স্থাপন করা রপ্তানি মনিটরিং ডেস্ক বেশ কাজে লেগেছে।

তাছাড়া, ভারতকে বিশ্ব বাজারে এক নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করতেও সফল হয়েছে নয়াদিল্লী। ফলত, বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সাধনে সক্ষম হয়েছে তারা। একই সঙ্গে, ভারত জুড়ে ‘এক জেলা এক পণ্য’ (ওডিওপি) এর মতো উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের প্রতি জেলাকে রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আরম্ভ করেছে মোদী সরকার। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক