সফরে দু দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরের বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন বরিস জনসন।

দু দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, সকালে গুজরাটের আহমেদাবাদে অবতরণ করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর। আগামীকাল শুক্রবার দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বরিস জনসন। তাদের আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

জানা গিয়েছে, এই সফরে বরিস জনসন দু দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরের বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ জন্য আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয়কে যুক্তরাজ্যের ভিসা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ এছাড়া এই চুক্তি সাক্ষর হলে দু দেশের মধ্যকার বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড বেড়ে যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ভারতে আসার পথে উড়োজাহাজে বরিস জনসন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি সবসময়ই প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আমাদের দেশের আসার পক্ষে। আমাদের অর্থনীতিতে হাজারো (দক্ষ) মানুষের অভাব রয়েছে এবং এক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনে প্রগতিশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে।”

সফরের প্রথমদিনেই বরিস জনসন আহমেদাবাদের একটি আশ্রম পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সঙ্গেও দেখা করার সম্ভাবনা আছে তার। আজকের সফরসূচি অনুসারে, এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ভাদোদরায় উড়ে যাবেন জেসিবির একটি প্ল্যান্ট পরিদর্শনের জন্য। সেখান থেকে 'গিফট সিটি' নামে পরিচিত গান্ধীনগরের গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স টেক-সিটিতে যাবেন তিনি। এরপর সন্ধ্যায় দিল্লি রওনা হবেন।

এর আগে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, জাতিসংঘে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া ও রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে ভারতকে 'উপদেশ' দেওয়ার কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। তবে যুক্তরাজ্য ভারতকে মস্কোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্বুদ্ধ করছে।

বরিস জনসনের সফরের মধ্য দিয়ে দু দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি একইসঙ্গে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াবে ও উভয় দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে। তাই দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার একটি বড় অংশজুড়ে থাকবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি।

দুই দেশই চাচ্ছে এ বছরের শেষ নাগাদ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সব আলোচনা শেষ করতে। আপেল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিংড়ি ও আইনি সেবার বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি প্রায় শেষের পথে। ফলে এই বৈঠকে আলোচনার পরবর্তী পর্যায় শুরু হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।

দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসায় ১০০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগের কথা রয়েছে জনসনের এবারের সফরকালে৷ এর ফলে ব্রিটেনে প্রায় ১১ হাজার চাকরি হবে ৷ সুইচ মোবিলিটি ইলেকট্রিক বাসের কেন্দ্র তৈরি হবে ব্রিটেনে ৷ তার এশিয়া-প্যাসিফিক সদর দফতর খোলা হবে চেন্নাইয়ে৷

এতে 'ইউকে ইন ইন্ডিয়া'য় ০১ হাজারেরও বেশি সংখ্যক চাকরি হবে৷ ভারত ফোর্জ এবং ট্রাক নির্মাতা টেভ্ভা মোটরস দক্ষিণ-পূর্বে বিনিয়োগ করবে এবং ৫০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে ৷ ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানি মাসকেট আগামী তিন বছরে ব্রিটেনে ০৭ কোটি ৯০ লক্ষ পাউন্ড লগ্নি করবে ৷ এতেও ০১ হাজার ৬০০ সংখ্যক চাকরি হবে ব্রিটেন জুড়ে৷ বাণিজ্য উপদেষ্টা সংস্থা ফার্স্টসোর্স সাউথ ওয়েলস, মিডল্যান্ডস, উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমে নতুন অফিস খুলছে৷

কমপক্ষে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে উভয় দেশ। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভারতের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের ওপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করতে চায়। গত বছরের মে মাসে মোদী ও বরিসের মাঝে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সম্মেলনে ভারত ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্বের মর্যাদা দেওয়া হয়।

ওই সম্মেলনে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে মূল বিষয় ধরে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ২ দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ১০ বছরের একটি রোডম্যাপ হাতে নেয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক