লঙ্কাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসা প্রদানে সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে সেখানকার স্থানীয় ভিসা উইং কর্মীদের অফিসে না যাওয়াতে

সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে পড়ে লঙ্কানদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত। তবে, খবরটির যারপরনাই বিরোধীতা ও তীব্র প্রতিবাদ করেছে লঙ্কাস্থ ভারতীয় দূতাবাস। ১৩ মে, শুক্রবার, এক টুইটের মাধ্যমে তারা জানিয়েছে, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে, গোটা বিষয়টিই বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর। #শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় কনস্যুলেট-জেনারেল বা #ভারতের সহকারী হাই কমিশন ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে -খবরটি একেবারেই সত্য নয়। ভিসা প্রদানে সাময়িক বিঘ্ন প্রাথমিকভাবে ভিসা উইং কর্মীদের অপারেশন পরিচালনা করতে অক্ষমতার কারণে ঘটেছে। এই কর্মীদের বেশিরভাগই লঙ্কান নাগরিক। তারা অফিসে উপস্থিত না হওয়াতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।”

অপর এক টুইটে তারা আরও যোগ করেছে, “আমরা শীঘ্রই আমাদের কার্যকারিতা স্বাভাবিক স্তরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা #শ্রীলঙ্কানদের #ভারতে ভ্রমণের সুবিধার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। #ভারতীয়রা যেমন #শ্রীলঙ্কায় রয়েছে #শ্রীলঙ্কানদেরকেও আমরা #ভারতে স্বাগত জানাই।”

উল্লেখ্য, আর্থিক সঙ্কটে বিপন্ন শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধার করতে শুরু থেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। দেশটিকে জ্বালানী ও জরুরী ওষুধ দিয়ে সাহায্যের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে আরও ১০০০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দিয়েছে নয়াদিল্লী।

ইতোমধ্যে দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করেছে লঙ্কান সরকার। জনরোষে পড়ে বিদায় নিয়েছেন দেশটির রাজাপাক্ষে সরকার। আর্থিক সঙ্কটে বিপন্ন শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধার করতে ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি শ্রীলংকার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শপথ নিয়েছেন তিনি।

এরই মাঝে তাঁর সাথে দেখা করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার গোপাল বাগলে। ১৩ মে, শুক্রবার, লঙ্কান প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার অব্যাহত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।

এর আগে বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শিগগিরই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন গোতাবায়া। তিনি দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখারও আহ্বান জানান।

ভাষণে গোতাবায়া বলেন, চলতি সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি দেশবাসীর আস্থা অর্জন করবেন। সংবিধান সংশোধন করে গোতাবায়া তার বেশির ভাগ নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।

শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিলো প্রধান বিরোধী দল সামাজি জানা বালাওয়েগয়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার নাম। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, গোতাবায়া ক্ষমতায় থাকলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন না তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে গোতাবায়া এসজেবির সংসদ সদস্য শরৎ ফনসেকারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তাকেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গোতাবায়ার অধীন কোনো দায়িত্ব নেবেন না তিনি।

এছাড়া নতুন সরকার গঠন নিয়ে এসজেবির পক্ষ থেকে চারটি শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়। প্রথমত, প্রেসিডেন্টকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট নতুন সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

তৃতীয়ত, নির্বাহী প্রেসিডেন্টের পদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ার পর চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু তাতে রাজি হননি গোতাবায়া। এরপর তিনি ধরনা দেন নিজ দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে।

বুধবার রাতে তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শপথ নেওয়ার পর কলম্বোয় একটি মন্দির পরিদর্শনে যান রনিল বিক্রমাসিংহে। রনিল বিক্রমাসিংহে এর আগেও পাঁচবার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু এর দুই মাস পরেই তাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এদিকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবারও কলম্বোয় তার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়ে শ্রীলংকা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি।

ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। ঋণের চাপ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

শুক্রবার থেকে শ্রীলংকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভে রাজাপাকসের অনুগত কয়েক ডজন ব্যক্তির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামবানটোটায় রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।

অচলাবস্থা নিরসনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এরপর সেনা পাহারায় মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক