প্রায় নয় টন জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে নয়াদিল্লী থেকে হাইতির রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ভারতের কার্গো বিমান।
ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র হাইতিতে ক্রমবর্ধমান আভ্যন্তরীণ সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সাধারণ জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার এক বিশাল চালান পাঠিয়েছে ভারত। ২৯ জুলাই প্রায় নয় টন জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে নয়াদিল্লী থেকে হাইতির রাজধানী পোর্ট-অফ প্রিন্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ভারতের কার্গো বিমান। আন্তর্জাতিক সংহতি আইনে ভারতের এই পদক্ষেপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে কূটনৈতিক মহলে।
জানা গিয়েছে, ভারত প্রেরিত এই চালানটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী যেমন, জরুরী ঔষধসামগ্রী (ফার্স্ট এইড), দ্রুত ডায়গনিস্টিক পরীক্ষা যন্ত্র, এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসর্বেন্ট অ্যাসে পরীক্ষার আইটেম সহ নানাবিধ যন্ত্রাদি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরেই সশস্ত্র দলগুলোর সহিংসতায় প্রায় অচল হয়ে আছে পশ্চিম গোলার্ধের দেশ হাইতি। খুন, অপহরণ, লুটতরাজের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে হাইতিতে লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছেন। প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অনেককে অপহরণ করা হয়েছে। খাবারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এমন সহিংস অবস্থায় অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন হাইতির প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
তেমনই একজন হাইতির মাজোরি ইডোই। তিন সন্তানের মা, ৩০ বছর বয়সী ইডোই হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের একটি স্ট্যান্ড থেকে ফল কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো প্রায় সব বাণিজ্যিক রুট বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে তার কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে এসেছে। বাস্তুচ্যুতদের জন্য করা অস্থায়ী শিবিরগুলোতে সামান্য কিছু পণ্য বিক্রি করেন তিনি। যা থেকে আয়ও হয় যৎসামান্য। এতে চরম ক্ষুধায় তিন সন্তানসহ দিন কাটছে তার। খাদ্য সংকট নিরসনে ও নিরাপদ হাইতির জন্য একটি বৈধ সরকারের দাবি ইউডোর মতো হাজারো হাইতি নাগরিকের।
ক্ষুধা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) অনুসারে হাইতির প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সংঘাতের কারণে নিজেদের খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
২০২১ সালে হাইতির শেষ প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর থেকে দেশটিতে সশস্ত্র দলগুলো তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তার করেছে। এদের বেশিরভাগই রাজধানী দখল করে নিয়েছে। দখল করে নিয়েছে রাজধানীর আশপাশের প্রায় সব কৃষিজমি। জমি দখল লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গণধর্ষণ ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন।
এ পরিস্থিতিতে হাইতিতে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। জুন মাসে সাহায্যের জন্য  জাতিসংঘ সমর্থিত একটি বাহিনী হাইতিতে পৌঁছায়। পাশাপাশি কেনিয়ার পুলিশ রাজধানীতে টহল দিচ্ছে। তবে পূর্ণশক্তিসম্পন্ন বাহিনীগুলো কবে নাগাদ হাইতিতে পৌঁছাবে তা এখনো নিশ্চিত নন হাইতির বাসিন্দারা।
হাইতিতে সহিংস পরিস্থিতিতে কাজ করতে অক্ষম পরিবারগুলো এখন বেসরকারি সংস্থাগুলোর দেয়া খাদ্য রেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি কিটের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) হাইতির ক্যাম্পগুলোতে প্রধান সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর একটি। সংস্থাটি নিজেদের চারটি কেন্দ্রীয় রান্নাঘর থেকে ক্যাম্পে খাবার সরবরাহ করতে সহায়তা করে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক