ভারত ও উরুগুয়ের কর্মকর্তারা মন্টেভিডিওতে ষষ্ঠ পর্বের বিদেশ দফতর পরামর্শক সভা (এফওসি) অনুষ্ঠিত করেছেন।
ভারত ও উরুগুয়ের কর্মকর্তারা ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে মন্টেভিডিওতে ষষ্ঠ পর্বের বিদেশ দফতর পরামর্শক সভা (এফওসি) অনুষ্ঠিত করেছেন। এই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (পূর্ব) সচিব জয়দীপ মজুমদার এবং উরুগুয়ের ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাস আলবার্তোনি নেতৃত্ব দেন। এই বৈঠক দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই পরামর্শক বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রেলপথ, আয়ুর্বেদ ও যোগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, স্বাস্থ্য ও ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি এবং কনস্যুলার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ব্যাপক এজেন্ডা উভয় দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্কের প্রতিফলন, যা ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত শেষ বৈঠকের পর আরও গভীর হয়েছে।
বৈঠকের একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল ছিল কূটনীতিকদের আত্মীয়দের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এই চুক্তিটি আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দিনেশ ভাটিয়া এবং নিকোলাস আলবার্তোনি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে কূটনীতিকদের আত্মীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যা উভয় দেশের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
উভয় পক্ষই তাদের সম্পর্কের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজে বের করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা পরবর্তী এফওসি বৈঠকের তারিখও নির্ধারণ করেছেন, যা তাদের কূটনৈতিক সংলাপকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
এফওসি বৈঠকের পাশাপাশি, সচিব (পূর্ব) মজুমদার উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওমর পাগানিনির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, যা উভয় দেশের সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনা কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করছে না, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলিতেও সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করছে।
আলোচনায় বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়েও কথা হয়েছে, যা ভারত-উরুগুয়ে অংশীদারিত্বের বৈশ্বিক মাত্রাকে তুলে ধরে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং এই সঙ্গতি বৈশ্বিক মঞ্চে তাদের সহযোগিতাকে মসৃণ করে তুলেছে।
ভারত উরুগুয়েকে দক্ষিণ আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। এই সম্পর্কটি অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এবং কৌশলগত স্বার্থ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারা পরিচালিত। উরুগুয়ের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অনুকূল ব্যবসায়িক পরিস্থিতি দক্ষিণ আমেরিকায় প্রসারিত হওয়ার জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য তৈরি করেছে।
উরুগুয়ের সাথে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানো এমন সময়ে ঘটছে যখন ভারত লাতিন আমেরিকায় তার ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক জোটের পরিবর্তনশীল ধারা বিবেচনায় নিয়ে এই সংলাপ সময়োপযোগী।
উভয় দেশ যখন অগ্রসর হচ্ছে, তখন সর্বশেষ পরামর্শে গৃহীত রোডম্যাপ নতুন সহযোগিতামূলক প্রকল্প এবং উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রচেষ্টা শুধু উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে না, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। এখন শক্তিশালী সহযোগিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, ভারত-উরুগুয়ে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতিশীল দেখাচ্ছে, যা পারস্পরিক সম্মান, অভিন্ন লক্ষ্য এবং উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিতে পরিপূর্ণ। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক