ভারত বরাবরই নেপালের জন্য জরুরি সহায়তা প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে একটি
সম্প্রতি নেপালে আঘাত হানা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের প্রেক্ষিতে, ভারত সরকার জরুরি ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করেছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করবে। সোমবার (৭ অক্টোবর, ২০২৪) এই ত্রাণ সামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জরুরি ত্রাণ প্যাকেজের মধ্যে ৪.২ টন মানবিক সহায়তা সামগ্রী রয়েছে, যার মধ্যে ত্রিপল, স্লিপিং ব্যাগ, কম্বল, ক্লোরিন ট্যাবলেট ও পানির বোতল রয়েছে। এই সামগ্রীগুলো ভারত থেকে নেপালগঞ্জে দ্রুত প্রেরণ করা হয়েছে। ভারত সরকার আরও জানিয়েছে যে, অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসামগ্রী, ঔষধ এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী শীঘ্রই পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এই মানবিক উদ্যোগ ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সংকটকালীন সময়ে ত্বরিত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে।
ভারতের আঞ্চলিক প্রথম প্রতিক্রিয়াকারীর দায়বদ্ধতা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০১৫ সালে নেপালে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের পর ভারত ‘অপারেশন মৈত্রী’ চালু করেছিল, যা ভারতের বিদেশের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ত্রাণ মিশন ছিল। এই অভিযান তৎক্ষণাৎ ব্যাপক সহায়তা প্রদান করেছিল, যা নেপালের সংকটকালে ভারতের বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে অবস্থানকে শক্তিশালী করেছিল।
২০২৩ সালের নভেম্বরে নেপালের জাজরকোট ভূমিকম্পের পরও ভারত গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করেছিল, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রচেষ্টায় ভারতের দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন এবং সহযোগিতার প্রতিফলন।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নেপালের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় অংশে আঘাত হানা বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেকের প্রাণহানি হয়েছে, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে এবং হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ৭ অক্টোবর, ২০২৪ পর্যন্ত, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে, এবং ১৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। বৃষ্টিজনিত ঘটনায় বিভিন্ন অঞ্চলে ১৭৮ জন আহত হয়েছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্র প্রভাব আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে, এবং ভারত অন্যতম প্রথম দেশ হিসেবে সহায়তা প্রদান করেছে।
ভারতের বিভিন্ন সংস্থার অতিরিক্ত সহায়তা
সরকারি সহায়তার পাশাপাশি, বেশ কিছু ভারতীয় সংস্থা নেপালের দুর্যোগ ত্রাণ প্রচেষ্টায় অবদান রেখেছে। অরিয়েন্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এলআইসি নেপাল লিমিটেড এবং নেপাল এসবিআই ব্যাংক লিমিটেড নেপাল প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করেছে। সরকারি খাতের জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন কোম্পানি এসজিভিএন লিমিটেড এবং এনএইচপিসি লিমিটেডও এই তহবিলে অর্থ প্রদান করেছে। এই অর্থনৈতিক সহায়তা চলমান ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমকে সমর্থন করে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জীবিকা পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।
নেপালে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্ট শেয়ার করেছে, যেখানে এই সংস্থাগুলির অবদানকে স্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং নেপালের এই কঠিন সময়ে ভারতের সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
ভারতের নেপালস্থ রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তব বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতির জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নেপালকে সহায়তা করার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন। তিনি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে সংহতির উপর জোর দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে পাঠানো এক বার্তায় আন্তরিক শোক প্রকাশ করেছেন এবং পুনর্গঠন ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় ভারতের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রাষ্ট্রদূত শ্রীবাস্তব বলেন, “আমি সাম্প্রতিক বন্যার কারণে প্রাণহানি ও ক্ষতির জন্য গভীর সমবেদনা জানাই। প্রধানমন্ত্রী মোদির মতে, নেপালের জনগণের পাশে ভারত এই কঠিন সময়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা নেপাল সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।”
ভারতের সক্রিয় প্রতিক্রিয়া দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনরায় প্রতিফলিত করেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক