নেপালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সহায়তায় ভারত উল্লেখযোগ্য মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে
ভারত সরকার নেপালের জন্য ১০টি প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্টিল সেতুর প্রথম চালান সরবরাহ করেছে, যা প্রতিবেশী দেশের দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় ভারতের অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করেছে। নেপালের অনুরোধের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো পুনরুদ্ধারের জন্য এই সরবরাহ করা হয়। এই চালানের মূল্য ৩৮ কোটি নেপালি রুপি।
বুধবার (৯ অক্টোবর, ২০২৪) আনুষ্ঠানিকভাবে এই চালান হস্তান্তর করা হয়। ভারতের বিরগঞ্জে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল দেবী সহায় মীনা এটি পারসার প্রধান জেলা কর্মকর্তা দিনেশ সাগর ভুষালের কাছে হস্তান্তর করেন। এই চালানটি প্রথম চালান হিসেবে পৌঁছেছে এবং নেপালের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য ভবিষ্যতে আরও চালান আসবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে যে, এই সহায়তার অংশ হিসেবে আরও চালান পাঠানো হবে।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ
প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্টিল সেতুগুলি নেপালের পুনর্গঠন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে যেখানে বন্যা ও ভূমিধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই সেতুগুলি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনরায় সড়ক সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যাতে বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়গুলো আবারও প্রয়োজনীয় সেবা, বাজার এবং দেশের অন্যান্য অংশে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
নেপাল সরকার ভারতের সহায়তা চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছিল এবং ভারতের তরফ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সেতুর অংশগুলি অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে, যা নেপালের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতির নিদর্শন।
প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্টিল সেতুগুলি দ্রুত স্থাপনযোগ্য এবং টেকসই হওয়ায় যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের বৃহত্তর মানবিক সহায়তা
অবকাঠামোগত সহায়তার পাশাপাশি, ভারত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। গত দুই দিনে ভারত ২৫ টনেরও বেশি ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিস্কার সরঞ্জাম, ওষুধ, লাইফ জ্যাকেট, ঘুমানোর ম্যাট ও ব্যাগ, খাদ্যদ্রব্য, ইনফ্ল্যাটেবল নৌকা, কম্বল, ক্লোরিন ট্যাবলেট এবং বোতলজাত পানি।
এই ত্রাণ সামগ্রীগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয় এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় এই ত্রাণ সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভারতের এই দ্রুত এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া নেপালের প্রতি ভারতের প্রস্তুতি ও প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে, বিশেষ করে সংকটময় সময়ে। এই সহায়তা প্রতিবেশী দেশগুলোকে দুর্যোগ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার ভারতের বৃহত্তর নীতি অনুসারে দেওয়া হচ্ছে। কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় উল্লেখ করেছে যে, এই সহায়তা নেপালের প্রতি ভারতের অব্যাহত সমর্থনের অংশ এবং নেপালকে সাম্প্রতিক দুর্যোগ থেকে পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দিতে ভারত সর্বদা প্রস্তুত।
নেপালের প্রতি ভারতের সাম্প্রতিক সহায়তা শুধু তাদের মানবিক অঙ্গীকারকে প্রমাণ করে না, বরং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তিশালী বন্ধনও তুলে ধরে। ভারত ও নেপাল দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। সংকটকালে ভারত বারবার নেপালের পাশে দাঁড়িয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী দুর্যোগ সহায়তা, পুনর্গঠন প্রচেষ্টা বা উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করেছে।
নেপালের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় ভারতের প্রতিশ্রুতি
কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাস একটি বিবৃতিতে বলেছে, “নেপাল সরকারের অনুরোধে সরবরাহ করা এই সেতুগুলো দেশের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠায়। এই সেতুগুলোর মূল্য ৩৮ কোটি নেপালি রুপি, যা ভারত সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করছে।”
ভারত সরকার নেপালের সংকট মোকাবিলায় তাদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। পরবর্তী সময়ে আরও সেতুর অংশ এবং অতিরিক্ত সহায়তা সরবরাহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় দূতাবাস আশ্বস্ত করেছে যে, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ভারত সক্রিয়ভাবে সহায়তা করতে থাকবে।
এই সহায়তা প্যাকেজটি নেপালের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে, যখন দেশটি সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
ভারতের এই পদক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, বিশেষ করে সংকটময় সময়ে একে অপরকে সহায়তা করা। তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ভারত নেপালকে পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা দেশটির জনগণের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক