ভারতের মোট পোশাক রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ এখন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন
ভারতের পোশাকশিল্প ক্রমবর্ধমানভাবে বৈশ্বিক সোর্সিং কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করছে। সম্প্রতি মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মূল কারণ। আন্তর্জাতিক পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলা জটিল হয়ে উঠতে থাকায়, ভারতের নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক পরিবেশ মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বিশেষ করে উচ্চমূল্যের ফ্যাশন আইটেমের ক্ষেত্রে একটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সময়মতো উৎপাদন ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনার কারণে ভারত বৈশ্বিক বাজারে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।

গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে ভারতের অংশীদারিত্ব স্থিরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে ভারতের অংশ ছিল ৪%। ২০২৩ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৮%-এ। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, মার্কিন ক্রেতারা ভারতের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর কতটা আস্থা রাখে, বিশেষ করে প্রিমিয়াম পোশাক খাতে। যুক্তরাষ্ট্র যখন সরবরাহ শৃঙ্খলায় বৈচিত্র্য আনতে এবং চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে, তখন ভারতের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এটিকে একটি আকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরছে।

২০২৩ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, ভারতের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ এটি বৈশ্বিক পোশাকশিল্পে নিজের অবস্থান শক্ত করছে।

ভারতের পোশাকশিল্পের মূল শক্তি
ভারতের সাফল্যের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক শক্তি রয়েছে:

ভার্টিকাল ইন্টিগ্রেশন: ভারতের টেক্সটাইল শিল্প পুরো উৎপাদন চেইনটি অন্তর্ভুক্ত করে, যা তুলা চাষ থেকে সুতা তৈরি, বুনন, রং করা এবং পোশাক উৎপাদন পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্বনির্ভর সরবরাহ শৃঙ্খলা বাইরের সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমায় এবং একটি নির্ভরযোগ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।

দক্ষ শ্রমশক্তি: বিশাল ও দক্ষ শ্রমশক্তি, বিশেষত জটিল পোশাক ফিনিশিং এবং কাস্টমাইজেশনে পারদর্শিতা, উচ্চমানের ফ্যাশন আইটেম তৈরিতে ভারতের অন্যতম সম্পদ।

সরকারি সহায়তা: উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা স্কিমের মতো সহায়ক নীতিমালা সরকারের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে। এটি রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে।

তুলা উৎপাদন: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তুলা উৎপাদক হিসেবে ভারত তুলা-ভিত্তিক পোশাক উৎপাদনে প্রাকৃতিক সুবিধা ভোগ করে। দেশীয় কাঁচামালের সহজলভ্যতা এই খাতে শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করে।

প্রতিযোগিতার মুখে ভারতের চ্যালেঞ্জ
ইউএসআইটিসি প্রতিবেদনে কিছু চ্যালেঞ্জের দিকও তুলে ধরা হয়েছে:

শ্রম ব্যয়: ভারতের শ্রম ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, যা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা।

সিনথেটিক ফাইবার উৎপাদন: মানুষের তৈরি ফাইবারের উৎপাদন সীমিত হওয়ায়, এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভারতের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পরিকাঠামো ও সরবরাহ ব্যবস্থা: উচ্চ সরবরাহ ব্যয় ও সীমিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হতে পারে।

ভারত ও অন্যান্য সরবরাহকারীদের তুলনা
ইউএসআইটিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনামূলক পরিসংখ্যান:
ভিয়েতনাম: মার্কেট শেয়ার ১৭.৮%; উভয় তুলা ও সিনথেটিক পোশাকে দক্ষ; শ্রম ব্যয় বেশি।
বাংলাদেশ: মার্কেট শেয়ার ৬.২%; কম শ্রম ব্যয়; রাজনৈতিক অস্থিরতা।
ইন্দোনেশিয়া: মার্কেট শেয়ার ৮.৫%; উচ্চমানের জটিল পোশাক; সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যা।
পাকিস্তান: মার্কেট শেয়ার ৪.৫%; শক্তিশালী তুলা খাত; ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি।

উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
ভারত তার নির্ভরযোগ্যতা ও উচ্চমানের উৎপাদন মডেল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। শৃঙ্খলাবদ্ধ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মনোযোগ দিয়ে ভারত বৈশ্বিক পোশাকশিল্পে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক