কূটনৈতিক ও কনসুলার সম্পত্তিতে কোনো অবস্থাতেই আক্রমণ হওয়া উচিত নয়, বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের আগরতলার কার্যালয়ে আক্রমণের ঘটনার পর ভারত সরকার কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর ২০২৪) এক বিবৃতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে "গভীর দুঃখজনক" বলে অভিহিত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশের অন্যান্য ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে অনুপ্রবেশের ঘটনাটি গভীর দুঃখজনক।
কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক বা কনসুলার সম্পত্তি আক্রমণের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়।”
“সরকার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশের অন্যান্য ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে,” বিবৃতিতে আরও জানানো হয়।
“সরকার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশের অন্যান্য ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে,” বিবৃতিতে আরও জানানো হয়।
প্রতিবাদের সূত্রপাত
সোমবার আগরতলায় ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা লঙ্ঘন ঘটে। প্রতিবেদনে জানা যায়, তারা গত মাসে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের দ্বারা গ্রেফতারকৃত হিন্দু পুরোহিত ও সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ করছিল।
দাসকে গত অক্টোবরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে তাঁর নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের পর দায়ের করা হয়েছিল। আদালত তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
এর আগে, দাসের গ্রেফতার এবং জামিন প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিন্দা জানায় এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।
.
নভেম্বরের ২৬ তারিখে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের দ্বারা একাধিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং মন্দির ও দেবমূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
নভেম্বরের ২৬ তারিখে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের দ্বারা একাধিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং মন্দির ও দেবমূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানায়, “অপরাধীরা মুক্ত থাকলেও, একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বৈধ দাবি উপস্থাপনকারী ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।”
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে আক্রমণের নিন্দা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। তারা আরও উল্লেখ করে, যারা দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করছিল, তাদের ওপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
ভারতীয় অবস্থান
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে (২৯ নভেম্বর ২০২৪) বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দিয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “অস্থায়ী সরকারকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
দাসের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি এই প্রক্রিয়াগুলি ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ, এবং যথাযথ আইনি অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে পরিচালিত হবে।”
জয়সওয়াল আরও বলেন, “আমরা ইসকন-কে একটি বিশ্বব্যাপী সম্মানিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি, যারা সামাজিক সেবায় অত্যন্ত দক্ষ।” বিশেষজ্ঞদের ধারণা ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব পদক্ষেপ এবং মন্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক