বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি $৩৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী
ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনাকে ত্বরান্বিত করেছে, যা বাণিজ্য, প্রযুক্তি সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক সংহতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর, ২০২৪) ইইউর রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এফটিএকে “ভারসাম্যপূর্ণ, উচ্চাভিলাষী, বিস্তৃত ও পারস্পরিক সুবিধাজনক” করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
নয় দফা গভীর আলোচনা পর্যালোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইইউর ১৮টি সদস্য রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মন্ত্রী গোয়েলের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মন্ত্রী গোয়েল বলেন, রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন যাতে একটি অর্থনৈতিকভাবে অর্থবহ ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি সম্ভব হয়। তিনি টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে “কমন বাট ডিফারেন্সিয়েটেড রেসপন্সিবিলিটি”-এর নীতির ওপর জোর দেন, যা বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের গতিপথের বৈচিত্র্যকে সম্মান করে।
মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের অর্থনীতি প্রতিবছর ৭-৮% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিগগিরই এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। তার প্রত্যাশা, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি $৩৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ইইউর জন্য ভারতের প্রসারমান বাজার এবং স্থিতিশীল সরবরাহ চেইনের সুযোগ কাজে লাগানোর দরজা খুলে দেবে।
ভারত-ইইউ অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা
ইইউর প্রতিনিধিরাও এই অংশীদারিত্বের অপার সম্ভাবনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তারা বলেন, আরও গভীর অর্থনৈতিক সংহতি উভয় অঞ্চলের জন্য বাণিজ্য শক্তিশালী এবং টেকসই উন্নয়ন সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইইউ বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ $১৩৭.৪১ বিলিয়ন এবং সেবার বাণিজ্য $৫১.৪৫ বিলিয়ন। প্রস্তাবিত এফটিএ আরও পণ্য ও সেবার বৈচিত্র্য আনবে এবং স্থিতিশীল মূল্য চেইন নিশ্চিত করবে।
আলোচনার প্রধান ক্ষেত্র
এফটিএ আলোচনায় মূল খাতগুলির মধ্যে রয়েছে শিল্প পণ্য, কৃষিজ পণ্য, সেবা, সরকারি ক্রয়, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ও টেকসই উন্নয়ন। একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি ভারতের “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং এটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠার লক্ষ্যে সহায়ক হবে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা
যদিও এফটিএর আলোচনায় গতি এসেছে, তবে এটি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যেমন টেকসই উন্নয়নে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, শুল্ক হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড। বিশেষ করে, ইইউর সাম্প্রতিক ৭০০টি ভারতীয় ওষুধ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আলোচনায় চাপ বাড়িয়েছে।
এছাড়া, উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য সুবিধার ভারসাম্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিষেবার উদারীকরণ ভারতের জন্য সুবিধাজনক হলেও পণ্যে শুল্ক হ্রাস আয়হানি ঘটাতে পারে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত
ভারত ও ইইউর মধ্যে এই এফটিএ আলোচনা বৈশ্বিক বাণিজ্যের একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। সরবরাহ চেইন ব্যাঘাত এবং টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের মধ্যে, এই চুক্তি উভয় অঞ্চলের জন্য সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সুযোগ তৈরি করবে।
যত আলোচনার অগ্রগতি হবে, ভারত-ইইউ এফটিএ কূটনীতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার শক্তির প্রতীক হয়ে থাকবে, যা একটি নতুন যুগের সম্ভাবনা ও অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।