যৌথ কমিশনিং প্রক্রিয়া ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতা ও দেশীয় জাহাজ নির্মাণে অভূতপূর্ব অগ্রগতি প্রদর্শন করে।
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে দুটি সামনের সারির যুদ্ধজাহাজ - নিলগিরি এবং সুরাট, এবং একটি সাবমেরিন - বাঘশীর কমিশন করা হবে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে। নিলগিরি হল স্টেলথ ফ্রিগেট শ্রেণির জাহাজ, আর সুরাট স্টেলথ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির। বাঘশীর হল স্করপিন শ্রেণির প্রজেক্টের ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত সাবমেরিন।

এই তিনটি জলযান কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে মেশিনারি, কাঠামো, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা এবং ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সমুদ্রপথে নেভিগেশন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রমাণিত হয়েছে। এগুলো এখন সম্পূর্ণরূপে কার্যক্ষম এবং মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত।

“নিলগিরি, সুরাট এবং বাঘশীরের যৌথ কমিশনিং ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতা এবং দেশীয় জাহাজ নির্মাণে অভূতপূর্ব অগ্রগতিকে প্রদর্শন করে,” বুধবার (১ জানুয়ারি ২০২৫) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

যেকোনো পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন
নিলগিরি প্রজেক্ট ১৭এ-র প্রধান জাহাজ। এটি শিবালিক শ্রেণির ফ্রিগেটগুলোর তুলনায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য স্টেলথ বৈশিষ্ট্য এবং কম রাডার সিগনেচার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে, সুরাট হল প্রজেক্ট ১৫বি-র একটি ডেস্ট্রয়ার। এটি কলকাতা-ক্লাস (প্রজেক্ট ১৫এ) ডেস্ট্রয়ারগুলোর পরবর্তী সংস্করণ, যার নকশা এবং সক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, উভয় জাহাজ ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা নকশাকৃত। এগুলো উন্নত সেন্সর এবং অস্ত্র প্যাকেজ দিয়ে সজ্জিত, যা প্রধানত ভারতে উন্নত বা বিশ্বমানের নির্মাতাদের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে তৈরি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিলগিরি এবং সুরাট আধুনিক বিমান চালনার সুবিধা নিয়ে সজ্জিত। এগুলো চেতক, এএলএইচ, সি কিং, এবং সদ্য অন্তর্ভুক্ত এমএইচ-৬০আর হেলিকপ্টারগুলি দিনে এবং রাতে পরিচালনা করতে সক্ষম।

রেল-লেস হেলিকপ্টার ট্রাভার্সিং সিস্টেম এবং ভিজ্যুয়াল এইড অ্যান্ড ল্যান্ডিং সিস্টেমের মতো বৈশিষ্ট্য যেকোনো পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন নিশ্চিত করে। “এই জাহাজগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী অফিসার এবং নাবিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা সামনের সারির লড়াইয়ে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর অগ্রগতি প্রদর্শন করে,” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বহুমুখী ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন
বাঘশীর হল কালভারি-ক্লাস প্রজেক্ট ৭৫-এর অধীনে ষষ্ঠ স্করপিন-ক্লাস সাবমেরিন। এটি বিশ্বের অন্যতম নিরব এবং বহুমুখী ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন হিসেবে বিবেচিত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি অ্যান্টি-সারফেস ওয়ারফেয়ার, অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, এলাকাভিত্তিক নজরদারি এবং বিশেষ অপারেশনের মতো বিভিন্ন মিশনে অংশ নিতে সক্ষম।

তারযুক্ত টর্পেডো, অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত সোনার সিস্টেমের মতো অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত এই সাবমেরিনে মডুলার নির্মাণ প্রযুক্তি রয়েছে, যা ভবিষ্যতে এয়ার ইনডিপেন্ডেন্ট প্রপালশন প্রযুক্তি সংযুক্ত করার মতো আপগ্রেডের জন্য উপযুক্ত।

“এই ঐতিহাসিক ঘটনা শুধুমাত্র নৌবাহিনীর সামুদ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করে না, বরং প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে দেশের অসাধারণ অর্জনগুলোর প্রতীক। এটি ভারতীয় নৌবাহিনী এবং পুরো জাতির জন্য গর্বের মুহূর্ত, যা একটি শক্তিশালী এবং স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা পরিবেশ তৈরিতে ভারতের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে,” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।