মালদ্বীপের বিপদের সময়ে ভারতের জরুরি আর্থিক সহায়তার প্রশংসা করেছেন ক্ষুদ্র দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিল।
ভারত মালদ্বীপের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি, ২০২৫) নয়াদিল্লিতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ খালিলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই কথা বলেন। এদিন দুই দেশের মধ্যে উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের অনুদানের মাধ্যমে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেন, “মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতা, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, ফিনটেক এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি মালদ্বীপে উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ের বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। ভারত ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি এবং সাগর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মালদ্বীপের উন্নতি ও সমৃদ্ধির নিরবচ্ছিন্ন সমর্থক থাকবে।”

মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিল ২ থেকে ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত ভারতের সরকারি সফরে রয়েছেন। তার এই সফর ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর ভারত সফরের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এসেছে, যেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছিলেন।

মালদ্বীপ ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির দৃঢ় প্রতিফলন: জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বৈঠকের সময় জয়শঙ্কর ও খালিল প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং উভয় দেশের নজরে রাখা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক অগ্রগতির রিপোর্ট রয়েছে, তবে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। স্থানীয় মুদ্রার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের জন্য একটি কাঠামো স্বাক্ষরিত হয়েছে।”

ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ককে পুনরায় নিশ্চিত করে জয়শঙ্কর বলেন, মালদ্বীপ ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির একটি দৃঢ় প্রতিফলন। “বিভিন্ন খাতে আমাদের সম্পর্ক বাড়িয়েছে। মালদ্বীপ সবসময় ভারতের পাশে পেয়েছে। আমাদের জন্য আপনারা আমাদের প্রতিবেশী নীতির একটি মূর্ত উদাহরণ।”

তিনি ভারতীয় আর্থিক সহায়তার ওপর আলোকপাত করে জানান, ট্রেজারি বিল পুনঃসাবস্ক্রিপশন এবং ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৩,০০০ কোটি রুপি মুদ্রা বিনিময় মালদ্বীপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আরও বলেন, “মালদ্বীপে প্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানিতে ভারত সহযোগিতা করে এসেছে। আমরা আশা করি, এই সম্পর্ক আপনাদের কঠিন সময় পার হতে সহায়তা করেছে।”

ভারতের ‘প্রথম প্রতিক্রেতা’ ভূমিকার প্রশংসা
মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিল ভারতের জরুরি আর্থিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এটিকে মালদ্বীপের প্রতি ভারতের ‘প্রথম প্রতিক্রেতা’ ভূমিকার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, তিনি প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ও মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত-মালদ্বীপ সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

“উচ্চপর্যায়ের এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ এনে দিয়েছে, যা উভয় দেশের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্যও উপকারী হবে,” পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়।

সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। সেখানে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদি উল্লেখ করেন, ভারত মালদ্বীপের নিকটতম প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি ও সাগর দৃষ্টিভঙ্গিতে মালদ্বীপের বিশেষ স্থান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মালদ্বীপের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে পানীয় জল সরবরাহ, কিংবা কোভিড-১৯ এর সময় টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত সবসময়ই প্রতিবেশীর দায়িত্ব পালন করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল সামুদ্রিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। এর অংশ হিসেবে মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (এমএনডিএফ) উন্নত করতে ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সম্পদ প্রদান করবে। যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমএনডিএফ-এর নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা উন্নত করতে ভারত রাডার ব্যবস্থা ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।