প্রতিরক্ষামন্ত্রী সিং আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানে ভারতের সংলাপভিত্তিক নীতির ওপর আলোকপাত করেছেন
ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর, ২০২৪) লাওসের ভিয়েনতিয়ানে অনুষ্ঠিত ১১তম আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সভা-প্লাস (এডিএমএম-প্লাস) সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এ বক্তব্য প্রদান করেন। উচ্চপর্যায়ের এই ফোরামে আসিয়ানের ১০টি দেশ, তাদের আটটি সংলাপ সহযোগী দেশ এবং টিমর লেস্টের প্রতিরক্ষা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও সহযোগিতা কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সংলাপ প্রচার
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সিং আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানে ভারতের দীর্ঘস্থায়ী সংলাপভিত্তিক নীতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোর সমাধান সংলাপের মাধ্যমে করা সম্ভব। টেকসই সমাধান কেবল তখনই আসতে পারে, যখন দেশগুলো গঠনমূলকভাবে আলোচনায় যুক্ত হবে এবং পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।”
লাওস পিডিআরের ঐতিহাসিক বৌদ্ধ নীতিগুলোর চর্চা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিং বৈশ্বিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সেসব নীতির প্রয়োগের আহ্বান জানান।
ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিং বলেন, “ভারত নৌপরিবহন স্বাধীনতা, নিরবিচ্ছিন্ন বৈধ বাণিজ্য, এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে অবস্থান করে।”
দক্ষিণ চীন সাগর কোড অব কন্ডাক্ট নিয়ে আলোচনায়, সিং আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষ করে ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইনের জাতিসংঘ কনভেনশন (ইউএনসিএলওএস)-এর প্রতি অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি এমন একটি ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তির আহ্বান জানান যা অ-স্বাক্ষরকারী দেশের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে আঞ্চলিক উদ্বেগের মধ্যে আসে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার আন্তঃসম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে সিং এডিএমএম-প্লাস জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরক্ষা কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি নতুন সমাধান উদ্ভাবন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সিং বলেন, “প্রতিরক্ষা খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে আমাদের দুর্বল জনগোষ্ঠী এবং প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো রক্ষা করতে হবে। জলবায়ু-নিরাপত্তা আন্তঃসম্পর্ক গভীরভাবে বোঝা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি বৈশ্বিক সম্পদগুলো—যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য—সুরক্ষার আহ্বান জানান।
ভারত-আসিয়ান সম্পর্ক: এক দশকের অগ্রগতি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সিং ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির এক দশক পূর্তিতে আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার কথা স্মরণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯২৭ সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সর্বত্র ভারতকে দেখতে পেয়েছি, কিন্তু আমি তাকে চিনতে পারিনি।”
সিং বলেন, “ভারত আসিয়ানের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার, যা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি।” তিনি অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভারতের দীর্ঘদিনের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন।
১১তম এডিএমএম-প্লাস সম্মেলন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে যৌথ নিরাপত্তা উদ্বেগ সমাধান ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।
সম্মেলনের শেষে সিংয়ের শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং টেকসই ইন্দো-প্যাসিফিকের পক্ষে মতপ্রকাশ উপস্থিত সবার মধ্যে সাড়া জাগায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংলাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার পথ প্রশস্ত করতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক