প্রতিরক্ষাকে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিল ভারত ও কুয়েত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২১-২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কুয়েতে সরকারি সফর ভারত-কুয়েত সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে।
সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সফরের মাধ্যমে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থাপন করা হয়েছে, যা তাদের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
এই সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে: যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা কর্মীদের প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উন্নয়ন ও উৎপাদনে সহযোগিতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও উপকূল প্রতিরক্ষা, প্রতিরক্ষা খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন।
দুই পক্ষই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
২০২৫-২০২৯ সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি
নবায়িত সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এর মাধ্যমে শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য এবং নাট্যকলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২০২৫-২০২৮ ক্রীড়া সহযোগিতার কার্যনির্বাহী কর্মসূচি
ভারত ও কুয়েত ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যনির্বাহী কর্মসূচি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: ক্রীড়া
চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা এবং গণমাধ্যমে দক্ষতা বিনিময়, ক্রীড়া বিজ্ঞান ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ, ক্রীড়া নেতাদের সফর এবং যৌথ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ক্রীড়ার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি এবং জ্ঞান বিনিময় সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক সৌর জোটে কুয়েতের সদস্যপদ
কুয়েতের আন্তর্জাতিক সৌর জোটে যোগদান সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। এর মাধ্যমে কুয়েত সৌর শক্তি ব্যবহারের প্রসার এবং টেকসই ও নিম্ন-কার্বন প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রধান বিষয়
কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমাদ আবদুল্লাহ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-মুবারাক আল-সাবাহ’র সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উঠে এসেছে:
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ: বর্তমান জ্বালানি আমদানি-নির্ভর বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কুয়েত ভারতের প্রযুক্তি, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
জ্বালানি সহযোগিতা: বিদ্যমান জ্বালানি বাণিজ্য নিয়ে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি এই সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার উপায় খোঁজা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম: সন্ত্রাস দমন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রবাসী ভারতীয় ও মানবসম্পদ সহযোগিতা
কুয়েতে বড় ভারতীয় প্রবাসী জনগোষ্ঠীর কল্যাণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কুয়েতের নেতারা কুয়েতের উন্নয়নে ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদানের জন্য প্রশংসা করেছেন।
যৌথ সহযোগিতা কমিশন
এই মাসের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত যৌথ সহযোগিতা কমিশন বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং তদারকির জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির কুয়েত সফর ভারত-কুয়েত সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুই দেশ এই চুক্তিগুলো কার্যকর করতে একত্রে কাজ করবে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।