বিদেশে বিপদাপন্ন অবস্থায় থাকা নারীদের সহায়তায় ভারত সরকার নয়টি ‘ওয়ান-স্টপ সেন্টার’ (ওএসসি) প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে।
ভারতীয় নারীদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে, বিদেশে বিপদাপন্ন অবস্থায় থাকা নারীদের সহায়তায় সরকার নয়টি ‘ওয়ান-স্টপ সেন্টার’ (ওএসসি) প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটির অনুমোদনে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা নারীদের জন্য তাৎক্ষণিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান।
বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত সংযোগ
প্রস্তাবিত ওএসসি গুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন মহাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নারীদের প্রয়োজন মেটানো যায়।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর, ২০২৪) লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সবিত্রী ঠাকুর জানান, প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাতটি আশ্রয়কেন্দ্র সুবিধাসহ বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে (জেদ্দা ও রিয়াদ) স্থাপন করা হবে।
এছাড়া কানাডার টরন্টো এবং সিঙ্গাপুরে অ-আশ্রয় ওএসসি স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্র বিপদাপন্ন নারীদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন যেমন আইনি সহায়তা, পরামর্শ এবং জরুরি সহায়তা প্রদান করবে।
এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন ও ধারাবাহিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নির্দিষ্ট বাজেট রেখা প্রবর্তন করেছে।
ইন্ডিয়ান কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার ফান্ড (আইসিডব্লিউএফ)এই প্রোগ্রামের একটি কেন্দ্রীয় উপাদান হলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার ফান্ড, যা বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৭ সালে সংশোধিত আইসিডব্লিউএফ নির্দেশিকাগুলোতে জরুরি সহায়তার বিস্তৃত ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- আবাস ও খাওয়া: বিদেশে আটকে পড়া ব্যক্তিদের জন্য সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা।
- প্রত্যাবাসন সহায়তা: বিমান ভ্রমণ এবং মৃতদেহ ফেরানোর জন্য আর্থিক সহায়তা।
- আইনি সহায়তা: বিদেশি স্বামীর দ্বারা পরিত্যক্ত নারীদের জন্য বিশেষ আইনি পরামর্শ এবং সহায়তা।
- চিকিৎসা সহায়তা: বিদেশে ভারতীয় নাগরিকদের জরুরী চিকিৎসা সহায়তা।
নারী ক্ষমতায়নে বিশেষ মনোযোগ
ওএসসি প্রতিষ্ঠা সরকারের একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যা মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের দেশীয় উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই বিভাগ আর্থ-সামাজিকভাবে অবহেলিত নারী ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন স্কিম এবং সেবা পরিচালনা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, ২০০৫ বাস্তবায়ন।
- কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ২০১৩ কার্যকর।
- নারীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অস্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা।
- বিধবা এবং পুনর্বাসন কলোনিতে বসবাসরত নারীদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সরকার নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরির গুরুত্ব দিয়েছে, যা দেশ এবং বিদেশে নারী সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
প্রবাসী নারীদের জন্য অপরিহার্য সহায়তা
ওএসসি গুলো বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া ভারতীয় নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করবে। বিদেশে অনেক নারী তাদের স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত বা আটকে পড়ে আইনগত সহায়তা পেতে অক্ষম হন। এসব কেন্দ্র আশ্রয়, পরামর্শ এবং আইনি সহায়তার মাধ্যমে বিপদাপন্ন নারীদের জীবনে একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।
এক বিস্তৃত বিদেশনীতি
ভারতীয় নারীদের কল্যাণে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিস্তৃত বিদেশনীতির প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে আশ্রয় সুবিধাসহ কেন্দ্র স্থাপন বিশাল ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি মনোযোগের বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রমবর্ধমান ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য টরন্টো এবং সিঙ্গাপুর কেন্দ্রগুলো তাদের বিশেষ চাহিদা পূরণ করবে।
এই কেন্দ্রগুলো ২০২৫ সালে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের সমন্বয় এই উদ্যোগের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন। শুধু তাৎক্ষণিক সাহায্যই নয়, ওএসসি গুলো দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে, নারীদের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং মর্যাদার সঙ্গে জীবন পুনর্নির্মাণে সহায়তা করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক