জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের চ্যাপ্টার ০৭ অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নিয়ে গভীর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে এই যৌথ প্রশিক্ষণ।
ভারত ও মালয়েশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া ‘হারিমাউ শক্তি ২০২৪’ এর চতুর্থ সংস্করণ সোমবার (২ ডিসেম্বর, ২০২৪) মালয়েশিয়ার পাহাং জেলার বেন্টং ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রতিবছর পালাক্রমে ভারত ও মালয়েশিয়ায় আয়োজিত এই মহড়া চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের লক্ষ্য, জটিল জঙ্গলের পরিবেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যৌথ সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

যৌথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ
এ বছরের মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ভারতের মহার রেজিমেন্টের ৭৮ জন সদস্য এবং মালয়েশিয়ার রয়্যাল মালয়েশিয়ান রেজিমেন্টের ১২৩ জন সদস্য। প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের চ্যাপ্টার ০৭ অনুযায়ী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নিয়ে গভীর জ্ঞান আদান-প্রদান। এর আগের সংস্করণটি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উমরোই ক্যান্টনমেন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

‘হারিমাউ শক্তি’র মূল লক্ষ্যসমূহ
‘হারিমাউ শক্তি ২০২৪’-এর প্রধান লক্ষ্য হলো দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় উন্নত করা এবং ঘন জঙ্গলভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের দক্ষতা বাড়ানো। প্রশিক্ষণটি দুটি ধাপে বিভক্ত:

ক্রস-ট্রেনিং পর্ব: এই পর্বে লেকচার, ডেমোনস্ট্রেশন এবং জঙ্গল যুদ্ধের ব্যবহারিক ড্রিলের মাধ্যমে জ্ঞান ভাগাভাগি করা হয়। দুই পক্ষই একত্রে অপারেশনাল কৌশল ও পদ্ধতি অনুশীলন করে, যা জঙ্গল পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক।

যৌথ মহড়ার সিমুলেটেড পর্ব: এই পর্বে সৈন্যরা যৌথ সিমুলেটেড অভিযানে অংশ নেয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ ড্রিলের মধ্যে রয়েছে: সন্ত্রাসী বাহনের বিরুদ্ধে অভিযান, শিবির দখল, টহল এবং রেকি মিশন, অতর্কিত হামলার কৌশল, সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আক্রমণ।

এই প্রশিক্ষণ উভয় সেনাবাহিনীর জন্য কৌশলগত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, যা যৌথ সামরিক অভিযানের কার্যকারিতা উন্নত করে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মনোযোগ আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনিয়মিত যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হওয়া এলাকাগুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কার্যকর ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা সম্ভব।

সেনা কর্মকর্তাদের প্রশংসা
দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা ‘হারিমাউ শক্তি ২০২৪’-এর প্রশংসা করেছেন। এক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা বলেন, “এই মহড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। জঙ্গল এলাকা বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, এবং এই যৌথ প্রচেষ্টা উভয় পক্ষের কৌশল উন্নত করতে সহায়ক।”

মালয়েশিয়ার এক সেনা প্রতিনিধি বলেন, “‘হারিমাউ শক্তি’ আমাদের দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। একে অপরের কাছ থেকে শিখে আমরা কেবল সামরিক দক্ষতাই নয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও উন্নত করছি।”

প্রতিরক্ষা সম্পর্কের গভীরতা
মালয়েশিয়ার পাহাং জেলার জঙ্গলভিত্তিক এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এর কৌশলগত গুরুত্বের জন্য। ভারতীয় মহার রেজিমেন্টের রয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ব্যাপক অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে রয়্যাল মালয়েশিয়ান রেজিমেন্টের রয়েছে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে পরিচিতি এবং কৌশলগত দক্ষতা।

‘হারিমাউ শক্তি ২০২৪’ ভারত ও মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। তাৎক্ষণিক লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি এই মহড়া দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সৌহার্দ্য স্থাপনেও ভূমিকা রাখছে। আগামী দুই সপ্তাহে এই মহড়া উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর শিক্ষা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক